বাবার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন: সিএনএনকে মনিকা ইউনূস
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছেন তার কন্যা মনিকা ইউনূস। সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের ক্রিশ্চিয়ান আমানপোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মনিকা বলেছেন, বাংলাদেশ আমার বাবাকে ভুয়া অভিযোগে কারারুদ্ধ করার চেষ্টা করছে।
সিএনএনের প্রধান আন্তর্জাতিক উপস্থাপক ক্রিশ্চিয়ান আমানপোরের সাথে আলাপকালে ইউনূস কন্যা বলেন, ‘‘অনেক আলোকিত ব্যক্তি (প্রায় ১৫০ জন নোবেল বিজয়ী এবং বিভিন্ন সেক্টরের বিশ্বনেতা গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন) তার সমর্থনে চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। আমি মনে করি অনেকের মতো এই বিষয়ে কথা বলাটা আমার জন্য অপরিহার্য। ইউনূস ও তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং এর বিরুদ্ধে কথা বলাটা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’’
অভিযোগগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে মনিকা ইউনূস বলেন, ‘‘অভিযোগগুলো আসলেই সিভিল প্রকৃতির। এটা একটা কর্মসংস্থানের সমস্যা— যা সাধারণত দেওয়ানী আদালতে মোকাবিলা করা হবে, এটাকে অপরাধমূলক করা হয়েছে। তারা একেবারেই নির্বোধের মতো এটা করেছে। প্রকৃত অভিযোগে কারাদণ্ড হয় এবং এটাই সমস্যা।’’
দেওয়ানী অভিযোগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘না, একেবারেই বৈধ নয়। তিনি এবং তার সহকর্মীরা শতভাগ নির্দোষ। এর জন্য আপনাকে তার মেয়ের কথা নিতে হবে না। আন্তর্জাতিক আইনজীবীরা আছেন, যারা এতে নজর রাখছেন। এটা একেবারে মিথ্যা।’’
বাংলাদেশ সরকারের কাছে তার প্রত্যাশা সম্পর্কে জানতে চাইলে মনিকা বলেন, ‘‘আমার সবচেয়ে ভালো প্রত্যাশা হলো সমস্ত অভিযোগ প্রত্যাহার করা হোক। কেবল আমার বাবার নয়, বরং তার সহকর্মীদেরও। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং তিনি (শেখ হাসিনা) যে প্রস্তাবটি করেছিলেন আমার সেটা পছন্দ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি আন্তর্জাতিক আইনজীবী আনবেন এবং আন্তর্জাতিক আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে পরিস্থিতির মূল্যায়নকে স্বাগত জানাবেন। আমার শতভাগ বিশ্বাস— যদি তাই করা হয়, তাহলে সব অভিযোগ একেবারে মুছে যাবে। কারণ সেখানে কোনও অপরাধই নেই।
তার বাবার রাজনীতিবিদ হওয়ার এবং নিজের দল গঠনের অভিযোগের বিষয়ে ইউনূস কন্যা বলেন, ‘‘তিনি রাজনীতিবিদ নন। আমি মনে করি, নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পর এক মুহূর্তের জন্য তিনি এই সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করেছিলেন। আমি মনে করি, তিনি একজনের একটি দল। তার কোনও রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা নেই। আর এটা এমন একটা বিষয় যেটা নিয়ে— আপনি জানেন, আমরা কথা বলেছি এবং সেটা সামনে আসছে। কিন্তু এর কোনো বৈধতা নেই।’’
মনিকা ইউনূস বলেন, ‘‘আপনি জানেন, তারা একসাথে অসংখ্য ভালো কাজ করেছে। আর আমার ইচ্ছা যে, এটি কেবল সব গ্রামীণ সংস্থার কল্যাণের জন্যই নয়, বরং তিনি যে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, গ্রামীণ অর্থ ‘‘গ্রাম’’ ব্যাঙ্ক; যা ক্ষুদ্রঋণ এবং দরিদ্রতম, দরিদ্রদের চেয়েও দরিদ্র যারা, বিশেষ করে দরিদ্র নারীদের ক্ষমতায়ন সম্পর্কে অনেক কিছু করেছে।
‘‘আমার মতে, যদি আবার একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে সেটা চমৎকার হবে। বাংলাদেশের সুশীল সমাজে অনেক কিছু আছে, বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে— অর্থনৈতিক উন্নয়নের বাতিঘর, নেওয়ার জন্য অনেক মানুষ কাজ করছেন। আর এসবের ওপর ফোকাস করা যেতে পারে। এসবের ওপর ফোকাস করা উচিত। আমি একজন আমেরিকান নাগরিক। কিন্তু আমার জন্ম বাংলাদেশে। আমি বাংলাদেশে গিয়েছি। সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন, এই কারণেই লোকজন দেশে ফিরে যায়। কারণ তারা সেই সমস্ত উদ্ভাবনে মুগ্ধ হয়।’’
এর আগে, গত ১ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের এক মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার আসামিকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত। রায় প্রদানকারী বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানার স্বাক্ষরের পর ৮৪ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়। তবে আপিল করার শর্তে ড. ইউনূসসহ আসামিদের ১ মাসের জামিন দেওয়া হয়।
ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা এ রায় ঘোষণা করেন। এ মামলায় অন্য আসামিরা হলেন— গ্রামীণ টেলিকমের এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। তাদেরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, আসামিরা শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ৪(৭) (৮), ১১৭, ২৩৪ এর বিধান লঙ্ঘন করে আইনের ৩০৩(৫) ও ৩০৭ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তা প্রমাণিত হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। এ অবস্থায় আসামি গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ৪(৭) (৮), ১১৭, ২৩৪ ও বিধি ১০৭ লঙ্ঘনের জন্য ৩০৩(৩) ও ৩০৭ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের ওই আইনের ৩০৩ (৩) ধারার অপরাধে ০৬ (ছয়) মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫,০০০/-(পাঁচ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ১০ (দশ) দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৩০৭ ধারার অপরাধে ২৫,০০০/-(পঁচিশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে অতিরিক্ত ১৫ (পনেরো) দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলো।
এসএস