জাতিসংঘ কর্মীদের বিরুদ্ধে ৭ অক্টোবরের হামলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
ইসরায়েলের বিভিন্ন অবৈধ বসতি লক্ষ্য করে গত ৭ অক্টোবর হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। গাজার ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা সরবরাহকারী জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান ইউএনআরডব্লিউএ-এর বেশ কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে এ হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) লিখিত বিবৃতিতে এ অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অভিযোগের যথাযথ তদন্ত না হলে ইউএনআরডব্লিউএ-এর তহবিলে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তা বরাদ্দ বন্ধ থাকবে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে গত ৭ অক্টোবরের হামলার সঙ্গে ইউএনআরডব্লিউএর অন্তত ১২ জন কর্মীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।’
পরে একই দিন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউএনআরডব্লিউএতে কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে ৭ অক্টোবর হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ এসেছে। আমরা অস্থায়ীভাবে সংস্থাটিতে আর্থিক সহায়তা প্রদান বন্ধ রেখেছি এবং পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করছি সংস্থাটির কর্তৃপক্ষ এ ইস্যুতে দৃশ্যমান ও যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।’
শনিবার ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার জেনারেল (প্রধান নির্বাহী) ফিলিপ লাজারিনি সাংবাদিকদের এই অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন, সংস্থাটি ইতোমধ্যে অভিযোগ আসা কর্মীদের চাকরিচ্যুত করেছে এবং এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
লাজারিনি বলেন, ‘৭ অক্টোবরের ভয়াবহ হামলার সঙ্গে ইউএনআরডব্লিউএর কয়েকজন কর্মীর সংশ্লিষ্টতার তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষও কিছু তথ্য আমাদের সরবরাহ করেছে।’
‘সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বজায় রাখার স্বার্থে অভিযোগ আসার পর তাৎক্ষণিকভাবে বেশ কয়েকজন কর্মীকে বরখাস্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে আমি অভ্যন্তরীণ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। সেই তদন্তও শুরু হয়েছে।’
তবে কতজন কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে বা কতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে— সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি লাজারিনি। পাশাপাশি, গত ৭ অক্টোবরের হামলার সঙ্গে এই কর্মীদের কী ধরনের সংশ্লিষ্টতা ছিল, সে সম্পর্কেও কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
এদিকে এরআগে শুক্রবারই গাজায় বেসামরিকদের ওপর হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দেয় জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালত।
ইসরায়েলের সরকারের মুখপাত্র এলন লেভি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এই ব্যাপারটিকে কটাক্ষ করে বলেন. ‘একদিন হয়তো সংবাদমাধ্যমগুলোর হেডলাইন হবে— হামাসের সঙ্গে জাতিসংঘ কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা বিষয়ক প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করেছে ইসরায়েল।’
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সামরিক-বেসামরিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকসহ ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে হামাস যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় আরও ২৪০ জন ইসরায়েলি এবং অন্যান্য দেশের নাগরিককে।
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে সেদিন প্রথম একদিনে এতজন মানুষের হত্যা দেখেছে ইসরায়েল। অভূতপূর্ব সেই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। তার এক সপ্তাহ পর অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার বোমাবর্ষণে গাজায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার এবং ইসরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে ধসে যাওয়া বিভিন্ন ভবনের ধ্বংস্তূপের নীচে এখনো চাপা পড়ে আছেন কয়েক হাজার মানুষ।
গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সাত দিনের যুদ্ধবিরতি চলে। ওই বিরতিতে মোট ১০৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। বাকি ১৩২ জন এখনও তাদের হাতে আটক রয়েছেন।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর এক বছর পর ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা সরবরাহে ইউএনআরডব্লিউএ গঠন করে জাতিসংঘ। সংস্থাটির তহবিলের অধিকাংশই সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিশ্বের বিভিন্ন ধনী দেশ।
সূত্র : রয়টার্স
এসএমডব্লিউ