গাজায় জাতিসংঘের আশ্রয় কেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলা, নিহত অন্তত ৯
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা সাড়ে তিন মাস ধরে চলা এই অভিযানে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে গাজার প্রায় সব অবকাঠামো।
তারা মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবিরসহ বেসামরিক মানুষের বাড়ি-ঘর সব জায়গায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এবার দক্ষিণ গাজায় জাতিসংঘের আশ্রয় কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে ৯ জন নিহত হয়েছেন।
আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে জাতিসংঘের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরায়েলি বাহিনীর গোলাবর্ষণের পর বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন বলে গাজায় ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের একটি সংস্থার প্রধান জানিয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর ফিলিস্তিন রিফিউজিস ইন দ্য নিয়ার ইস্ট (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর গাজার পরিচালক থমাস হোয়াইট বলেছেন, ‘৮০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন এমন একটি ভবনে ট্যাংকের দুটি গোলা আঘাত হেনেছে। এই হামলায় ৯ জন নিহত এবং আরও ৭৫ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।’
এছাড়া বুধবার পৃথক এক পোস্টে হোয়াইট বলেছিলেন, বাস্তুচ্যুত বহু পরিবারের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আগুন লেগেছে।
আল জাজিরা বলছে, ইসরায়েলি এই হামলায় নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেছেন, হামলার এই ঘটনায় সম্ভবত মানুষ ‘গণ-হতাহত’ হয়েছে।
রাফাহ-ভিত্তিক ইউএনআরডব্লিউএর মুখপাত্র আদনান আবু হাসনা আল জাজিরাকে বলেছেন, জাতিসংঘ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাথে সমন্বয় করে ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, হামলার আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনও সতর্কতা জারি করা হয়নি।
এছাড়া ওই এলাকায় ইসরায়েলি ট্যাংকের উপস্থিতির কারণে জাতিসংঘের এই সংস্থাটি গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে কম্পাউন্ডে প্রবেশ করতে পারেনি। আবু হাসনা এই পরিস্থিতিটিকে ‘খুব বিপজ্জনক’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা সেখানে আইডিপিদের (অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের) বের করে আনার বিষয়টি সমন্বয় করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা সফল হইনি।’
ইউএনআরডব্লিউএ-র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি গাজার এই আশ্রয়কেন্দ্রে হামলাকে ‘যুদ্ধের মৌলিক নিয়মের প্রতি স্পষ্ট অবজ্ঞা’ বলে আখ্যায়িত করে নিন্দা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘এই কম্পাউন্ডটি জাতিসংঘের অবকাঠামো হিসেবে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত এবং এর অবস্থানও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সাথে শেয়ার করা হয়েছিল। যেমনটি আমরা আমাদের সমস্ত অবকাঠামোর ক্ষেত্রে করে থাকি।’
হামলায় নিহতদের সংখ্যা সম্ভবত আরও বেশি বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন ফিলিপ লাজারিনি।
এদিকে দক্ষিণ গাজায় জাতিসংঘের আশ্রয় কেন্দ্রে হওয়া এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেছেন, এই হামলাটি ‘অবিশ্বাস্যভাবে উদ্বেগজনক’।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইউএনআরডব্লিউএর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আজকের হামলার নিন্দা জানাই। বেসামরিক মানুষকে অবশ্যই সুরক্ষিত করতে হবে এবং নিরাপদ বলে বিবেচিত জাতিসংঘের অবকাঠামোগুলোর সুরক্ষাকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে।’
টিএম