হুথিদের সঙ্গে সংঘাত চায় না যুক্তরাজ্য : সুনাক
লোহিত সাগরে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট সব জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করছে ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথি। এর জেরে ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীর অবস্থানগুলোতে দফায় দফায় হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এমন অবস্থায় গাজার বাইরেও নতুন করে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে হুথিদের সঙ্গে সংঘাত চায় না যুক্তরাজ্য। এমন তথ্যই জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এমপিদের বলেছেন, যদি হুথি গোষ্ঠী লোহিত সাগরে তাদের হামলা অব্যাহত রাখে তবে ইয়েমেনে হুথিদের লক্ষ্যবস্তুগুলোর বিরুদ্ধে আরও সামরিক পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবে না যুক্তরাজ্য।
সুনাক বলেছেন, যুক্তরাজ্য ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীর সাথে সংঘর্ষ চায় না, তবে আত্মরক্ষায় কাজ চালিয়ে যাবে।
এর আগে গভীর রাতে ইয়েমেনে হুথিদের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে নতুন করে যৌথ বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন পরে জানায়, হুথি গোষ্ঠীর ওপর সোমবারের এই হামলায় আটটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়েছে। যার মধ্যে একটি ভূগর্ভস্থ স্টোরেজ সাইট এবং হুথি ক্ষেপণাস্ত্র ও নজরদারি সক্ষমতাও রয়েছে।
ইয়েমেনে হুথিদের লক্ষ্যবস্তুতে এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অষ্টম হামলা। আর গত ১১ জানুয়ারি যৌথ হামলা চালানোর পর এটি ছিল যুক্তরাজ্যের সাথে দ্বিতীয় যৌথ অভিযান। অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা এবং নেদারল্যান্ডসের সমর্থনে এই হামলা চালানো হয় বলেও জানায় পেন্টাগন।
ব্রিটেনের লেবার নেতা স্যার কির স্টারমার বলেছেন, তিনি ‘টার্গেটেড হামলাকে’ সমর্থন করেছেন।
বিবিসি বলছে, ব্রিটিশ বাহিনীর চারটি আরএএফ টাইফুন এবং দুটি ভয়েজার ট্যাংকার সোমবার রাতে হুথিদের বিরুদ্ধে মার্কিন-ব্রিটিশ যৌথ হামলায় অংশ নেয়। তারা ইয়েমেনের রাজধানী সানার উত্তরে জাহাজ চলাচলে হামলার জন্য ব্যবহৃত দুটি সামরিক স্থানকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। প্রধানমন্ত্রী সুনাক বলেছেন, হামলায় সব লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার হাউস অব কমন্সে ভাষণ দিতে গিয়ে সুনাক আরও বলেন: ‘আমরা কোনও সংঘর্ষ চাই না। আমরা হুথিদের এবং যারা তাদের এই অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য আক্রমণ বন্ধ করতে পারে তাদের প্রতি সেটিই করার আহ্বান জানাই। তবে প্রয়োজনে, যুক্তরাজ্য আত্মরক্ষায় আবার হামলা করতে দ্বিধা করবে না।’
হামলায় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব’ দেওয়া হয়েছিল বলেও দাবি করেন সুনাক। তার দাবি, হামলার ফলে কোনও বেসামরিক লোক মারা যায়নি।
ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক থাকার সন্দেহে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে হুথিদের হামলা লোহিত সাগরে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন
মূলত ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে গত প্রায় তিন মাস ধরে লোহিত সাগরে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট ও ইসরায়েলগামী জাহাজে অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে আসছে হুথি বিদ্রোহীরা। ইরান সমর্থিত সশস্ত্র এই গোষ্ঠী জানিয়েছে, যতদিন গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা চলবে ততদিন তারা হামলা চালিয়ে যাবে।
এর মাঝেই হুথিদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জোটের হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় ব্যাপক উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
হুথিরা মূলত ইয়েমেনের শিয়া মুসলিম সংখ্যালঘু জাইদি নামের উপ-সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী। বেশিরভাগ ইয়েমেনি হুথিদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বসবাস করে। পাশাপাশি সানা এবং ইয়েমেনের উত্তরে হুথিরা লোহিত সাগরের উপকূলরেখাও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার হুথিদের এই হামলার নিন্দা করেছে। তবে এই সরকার ইয়েমেনে নয় বরং সৌদি আরবের রিয়াদে থেকে কাজ করছে।
টিএম