প্রায় এক দশকে সাগরে সর্বোচ্চ রোহিঙ্গার মৃত্যুর রেকর্ড
মিয়ানমার কিংবা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় গত বছর অন্তত ৫৬৯ জন রোহিঙ্গা সাগরে নিহত অথবা নিখোঁজ হয়েছেন। সাগরে রোহিঙ্গাদের প্রাণহানি অথবা নিখোঁজের এই সংখ্যা ২০১৪ সালের পর প্রায় গত দশকের মধ্যে এক বছরে সর্বোচ্চ বলে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে।
মঙ্গলবার ইউএনএইচসিআরের এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের জাতিগত সংখ্যালঘু এই গোষ্ঠীর সুরক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, আন্দামান সাগর কিংবা বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টার সময় গত এক দশকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গা নিহত বা নিখোঁজ হয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আর সাগরে ২০২৩ সালে রোহিঙ্গাদের নিখোঁজ কিংবা নিহতের এই সংখ্যা ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ। ওই বছর সাগরে ৭৩০ জন রোহিঙ্গা নিহত অথবা নিখোঁজ হন।
ইউএনএইচসিআর বলছে, সাগর পাড়ি দিয়ে বেঁচে ফেরা ব্যক্তিরা লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতাসহ ভ্রমণের সময় নিপীড়ন এবং শোষণের শিকার হওয়ার মতো ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।
‘‘সাগরপথে যে রোহিঙ্গারা যাত্রার চেষ্টা করেন তাদের বেশিরভাগই শিশু এবং নারী। এই রোহিঙ্গাদের প্রায় ৬৬ শতাংশই প্রাণঘাতী পথে যাত্রা করেছিলেন। তাদের মধ্যে অনেক শরণার্থী বাংলাদেশ থেকে সাগরপথে যাত্রা করেন। তবে বাংলাদেশের পাশাপাশি মিয়ানমার থেকেও কিছু রোহিঙ্গা সাগরপথে যাত্রা করেন।’’
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সামরিক বাহিনী রাখাইনে জাতিগত নিধন অভিযান শুরু হয়। এই অভিযান থেকে বাঁচতে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পাড়ি জমান। বর্তমানে কক্সবাজারে বাঁশ ও প্লাস্টিকের তৈরি শরণার্থী শিবিরে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা মিয়ানমারের জান্তা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
মিয়ানমারে দশকের পর দশক ধরে জাতিগত নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন রোহিঙ্গারা। দেশটির কোনও সরকারই এই রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়নি। বরং রোহিঙ্গারা অন্য দেশ থেকে রাখাইনে পাড়ি জমিয়ে বসতি গড়েছেন বলে দাবি করছে মিয়ানমার।
শরণার্থী শিবিরের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এবং মিয়ানমারে ফেরা কিংবা পুনর্বাসিত হওয়ার আশা ক্ষীণ হয়ে আসায় তাদের অনেকে নতুন জীবনের সন্ধানে নৌকায় চেপে এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
২০২৩ সালের নভেম্বরের একদিনের ঘটনায় আন্দামান সাগরে নৌকা ডুবে অন্তত ২০০ রোহিঙ্গার প্রাণহানি ঘটেছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। ভবিষ্যতে এই ধরনের নির্মম ঘটনা প্রতিরোধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আঞ্চলিক উপকূলীয় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সঠিক সময়ে উদ্ধার এবং নিকটতম নিরাপদ স্থানে অবতরণের ক্ষেত্রে উপকূলীয় দেশগুলোর নজরদারি না থাকায় বাংলাদেশ কিংবা মিয়ানমার ছাড়তে মরিয়া রোহিঙ্গাদের আরও বেশি প্রাণহানি ঘটছে।
ইউএনএইচসিআর বলছে, ‘‘সমুদ্রে দুর্দশাগ্রস্তদের উদ্ধার এবং জীবন বাঁচানো একটি বাধ্যতামূলক মানবিক পদক্ষেপ। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইনের আওতায় এটি দীর্ঘস্থায়ী কর্তব্যও।’’
সূত্র: রয়টার্স।
এসএস