গাজায় ভয়াবহ পাল্টা হামলা, একদিনে নিহত ২৪ ইসরায়েলি সেনা
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে ইসরায়েল। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে অভিযান চালানোর সময় পাল্টা হামলায় একদিনে ২৪ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে।
গাজা সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল এবারই প্রথম একদিনে এতো বেশি সংখ্যক সেনা হারালো। মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় একদিনে ২৪ জন ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়েছে বলে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী মঙ্গলবার জানিয়েছে। এর মাধ্যমে গত বছরের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এক দিনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সেনার মৃত্যু দেখল ইসরায়েল।
ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি সাংবাদিকদের বলেছেন, বিস্ফোরণে ২১ সেনা নিহত হয়েছে। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা একটি ট্যাংকে রকেট চালিত গ্রেনেড নিক্ষেপ করে এবং একই সময়ে দুটি ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। সেখানে ইসরায়েলি বাহিনী সেগুলো ধ্বংস করার জন্য বিস্ফোরক স্থাপন করছিল। বিস্ফোরণের জেরে ভবনগুলো সৈন্যদের ওপর ধসে পড়ে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও ঘটনার বিবরণ এবং বিস্ফোরণের কারণগুলো বোঝার চেষ্টা করছি এবং তদন্ত করছি।’
এর আগে আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছিল, দক্ষিণ গাজায় পৃথক হামলায় তাদের আরও তিন সেনা নিহত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল কিদরা রয়টার্সকে বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার খান ইউনিসের পশ্চিমাঞ্চলের গভীরে হামলা চালানোর পাশাপাশি বিমান, সমুদ্র এবং স্থলপথে বোমাবর্ষণ করে চলেছে। এছাড়া খান ইউনিসের একটি হাসপাতালে হামলা এবং চিকিৎসা কর্মীদের গ্রেপ্তারও করেছে ইসরায়েল।
অবশ্য হামলা শিকার হাসপাতালের পরিস্থিতি নিয়ে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনও কথা বলা হয়নি এবং ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্রের অফিস থেকেও কোনও মন্তব্য করা হয়নি। কিদরা বলেন, খান ইউনিসে গত রোববার রাতে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। আর চিকিৎসা অবকাঠামো অবরোধের অর্থ হলো কয়েক ডজন মৃত ও আহত ব্যক্তিরা উদ্ধারকারীদের নাগালের বাইরে থেকে যান।
এই পরিস্থিতিতে নিরপরাধ ফিলিস্তিনি ও চিকিৎসা কর্মীদের রক্ষা করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি সোমবার বলেছেন, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে, তবে ‘আমরা আশা করি তারা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তা করবে এবং হাসপাতাল, চিকিৎসা কর্মী এবং রোগীদের পাশাপাশি নিরপরাধ লোকদের রক্ষা করবে, যতটুকু সম্ভব’।
আরও পড়ুন
ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাস যোদ্ধারা হাসপাতালে এবং এর আশপাশে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। যদিও হামাস এবং গাজার চিকিৎসা কর্মীরা এটি অস্বীকার করেছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৬৩ হাজার মানুষ।
জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
টিএম