নির্বাচনী প্রচারে নওয়াজের দল, সমাবেশের অনুমতিই পাচ্ছে না পিটিআই
পাকিস্তানের আগামী মাসের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। সেনাবাহিনীর সমর্থন ইতিমধ্যে নওয়াজকে প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় এগিয়ে রাখছে বলে বিরোধীদের অভিযোগের মাঝেই সোমবার প্রচারণা শুরু করেছে পিএমএল-এন। তবে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) কর্তৃপক্ষ সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে সাধারণ নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করেছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। পাকিস্তানের এই নির্বাচনের আগে নওয়াজ শরিফের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এবং কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দলের নেতাকর্মীদের ওপর প্রশাসনের ব্যাপক দমন-পীড়নের অভিযোগ উঠেছে। দেশটিতে চলমান অনিশ্চিত পরিবেশের মাঝে নওয়াজের দলের নির্বাচনী প্রচারণায় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
নওয়াজ শরিফের কন্যা মরিয়ম নওয়াজ সোমবার দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশের পূর্বাঞ্চলীয় শহর ওকারা থেকে পিএমএল-এনের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। নওয়াজের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসেবে মনে করা হয় মরিয়মকে।
ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হওয়া পাকিস্তানে মুদ্রাস্ফীতির হার বর্তমানে প্রায় ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে। এ নিয়ে দেশটির সাধারণ ভোটারদের মাঝে সরকারবিরোধী তীব্র মনোভাব দেখা গেছে। নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে নওয়াজ কন্যা বলেছেন, ‘‘আপনারা আমাদের যত বেশি ভোট দেবেন, আপনাদের পরিবারের ব্যয় তত বেশি কমবে।’’
প্রায় চার বছরের স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে গত বছরের শেষের দিকে লন্ডন থেকে দেশে ফেরেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, অস্থিতিশীল মুদ্রাবাজার আর রিজার্ভ তলানিতে নিয়ে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তানের সাড়ে ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। যদিও গত গ্রীষ্মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে প্রথম দফার বেল আউট নিয়ে ঋণ খেলাফি হওয়ার ঝুঁকি এড়িয়েছে পাকিস্তান।
বিশ্লেষকদের ধারণা, ক্ষমতায় থাকাকালীন ৭১ বছর বয়সী সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খানের সাথে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর ব্যাপক অচলাবস্থা তৈরি হয়। পরে সংসদে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন ইমরান খান। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে উপহার সামগ্রী লুটের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন তিনি। এ নিয়ে দেশটিতে তীব্র সংঘাতও দেখা দেয়। ইমরান খানের বিরুদ্ধে কলকাঠি নেড়েছে সেনাবাহিনী।
অন্যদিকে, সামরিক বাহিনীর সমর্থনে ৭৪ বছর বয়সী নওয়াজ শরিফ দেশে ফিরেছেন বলে ধারণা করা হয়। পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সামরিক বাহিনীর এই সমর্থনই আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে নওয়াজ ও তার দলকে এগিয়ে রেখেছে। যদিও পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তারা রাজনীতি মুক্ত রয়েছে।
পাকিস্তানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভূট্টোর রাজনৈতিক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এই দলটিও ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। তবে পিপিপির নির্বাচনী প্রচারণা গত নির্বাচনের তুলনায় কিছুটা দুর্বল বলে মনে করা হচ্ছে।
পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ দেরীতে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলেও ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) বলেছে, কর্তৃপক্ষ তাদের সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে না। পিটিআইয়ের প্রার্থীরা বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
পাকিস্তানের বিশ্লেষক এবং বিরোধী রাজনীতিকরা বলেছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইমরান খানের পিটিআই সামরিক বাহিনীর সহায়তায় জয়ী হয়েছিল। আর এবারের নির্বাচনে পিটিআইয়ের প্রার্থীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পথ বন্ধ করতে রাষ্ট্র-সমর্থিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আইনী ও অন্যান্য উপায়ে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
নওয়াজ শরিফ ১৯৯০, ১৯৯৭ এবং ২০১৩ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৭ সালে সামরিক বাহিনীর সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন। পরে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে চলে যান তিনি। সেখানে দীর্ঘদিনের স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে দেশে ফিরে আবারও নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন দেশটির সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র: রয়টার্স, ডন।
এসএস