ইয়েমেনে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য
লোহিত সাগরের পাশ্ববর্তী দেশ ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। তবে হুথিদের পক্ষ থেকে পাল্টা হুমকি দেওয়া হয়েছে, যে কোনো হামলার কড়া জবাব দেবে তারাও।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পশ্চিমা সামরিক সূত্র তাদের জানিয়েছে, হুথিদের ওপর হামলা চালাতে জোরে সোরে প্রস্তুতি চলছে। গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ লক্ষ্য করে হুথিরা ২১টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানোর পর এ সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় এ দুটি দেশ। তবে হামলার তীব্রতা কেমন হবে এবং কখন হামলা চালানো হবে এ বিষয়টি স্পষ্ট নয়।
ইয়েমেনে হুথিদের ওপর হামলার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবির কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে বলব না। লোহিত সাগরে বাণিজ্য জাহাজ চলাচলে হুথিরা যে হুমকি তৈরি করেছে সেটি মোকাবেলায় আমাদের যা প্রয়োজন তাই করব।’
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন হুথিদের হামলার পর জানান, এর জবাব দেওয়া হবে। অপরদিকে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং পরবর্তীতে জানানো হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের হামলার পরিকল্পনা প্রকাশের পর ইরান সমর্থিত হুথি নেতা আব্দুল-মালিক আল-হুথি হুমকি দিয়ে বলেছেন. ‘হুথিদের ওপর হামলা চালালে আমরাও হামলা চালাব।’ তিনি হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, হুথিদের ওপর হামলা চালালে এটির পরিধি শুধুমাত্র বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো হামলা জবাব দেওয়া হবে। ২০টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে যে হামলা চালানো হয়েছে সেটির চেয়ে এটি আরও বড় হবে। আমরা ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট জাহাজে হামলা চালাতে আরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা এখান থেকে পিছপা হব না।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বৃহস্পতিবার মন্ত্রীসভা ও সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে হামলা পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো খুব সম্ভবত হুথিদের উপকূলীয় রাডার, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কেন্দ্রে হামলা চালাবে। যেন হুথিরা ব্যস্ত লোহিত সাগরের জাহাজ চলাচলের পথে হামলা বন্ধ করে দেয়।
তবে বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, হুথিদের ওপর আমেরিকান-ব্রিটিশ সেনাদের হামলা মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাদের অবস্থান আরও খারাপ করে দেবে। হামলায় অনেক মানুষ নিহত হবেন। তখন সবাই ভেবে নেবেন দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এ দেশগুলো।
গত ৯ বছর ধরে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে জর্জরিত হয়ে আছে ইয়েমেন। আগামী কয়েক দিন বা মাসের মধ্যে সৌদির সঙ্গে শান্তি চুক্তি করবে দেশটির হুথি বিদ্রোহীরা। এ সময়ে হামলা চালালে সেখানে স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলা জবাবে লোহিত সাগারে ইসরায়েলগামী বা ইসরায়েলি মালিকানাধীন জাহাজে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে হুথি বিদ্রোহীরা। তারা জানিয়েছে, যতদিন গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা বন্ধ না হবে ততদিন তারা হামলা চালিয়ে যাবে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
এমটিআই