গাজায় প্রাণহানি ২২ হাজার ছাড়াল
কিছু রিজার্ভ সৈন্যকে প্রত্যাহার করা সত্ত্বেও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে ট্যাংক থেকে ব্যাপক গোলাবষর্ণ ও বিমান হামলা চালাচ্ছে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসসহ ফিলিস্তিনের এই উপত্যকার অন্যান্য এলাকায়ও হামাসের যোদ্ধাদের সাথে ইসরায়েলি বাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। মঙ্গলবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সৈন্যরা গাজার উত্তরে সোমবার কয়েক ডজন হামাস যোদ্ধাকে হত্যার দাবি করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, মঙ্গলবার ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো গাজার মধ্যাঞ্চলের আল-বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের কিছু অংশে গোলাবর্ষণ করছে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে হামাসের যোদ্ধাদের সাথে ইসরায়েলি সৈন্যদের ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ২০৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আর এর মধ্য দিয়ে হামাস-নিয়ন্ত্রিত এই উপত্যকায় গত প্রায় তিন মাসের যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির সংখ্যা ২২ হাজার ১৮৫ জনে পৌঁছেছে। নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী, শিশু, অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৫৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।
আরও পড়ুন
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত বলেছেন, গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসের আশপাশের এলাকায় চলমান অভিযান হামাসের সুরঙ্গ নেটওয়ার্ককে কেন্দ্র করে পরিচালনা করা হচ্ছে। ওই এলাকায় হামাসের নেতারা লুকিয়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গাজায় ইসরায়েলি সৈন্যদের তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা সব উপায়ে তাদের (হামাসের) কাছে পৌঁছাচ্ছি। সেখানে ইতিমধ্যে লড়াই শুরু হয়েছে। সেখানে জিম্মিও আছে।’’ ইসরায়েলের এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, খান ইউনিসের কেন্দ্রে জোরদার অভিযান অব্যাহত থাকবে।
গাজার বাসিন্দাদের দুর্দশা ঘিরে বৈশ্বিক উদ্বেগের মাঝে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে একটি নতুন পর্ব শুরুর ইঙ্গিত দিয়ে ইসরায়েল কিছু সৈন্য প্রত্যাহার করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এই পরিকল্পনা ঘোষণার পরপরই গাজার দক্ষিণে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি সৈন্যরা।
ইসরায়েলের নির্বিচার বোমাবর্ষণে গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। উপত্যকার ২৩ লাখ বাসিন্দার জীবনে নেমে এসেছে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। গাজায় অনাহার-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন লাখ লাখ মানুষ। এই উপত্যকার হাজার হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের হুমকির মুখোমুখি হয়েছেন বলে সতর্ক করে দিয়েছে জাতিসংঘ। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, আরও কয়েক মাস ধরে এই যুদ্ধ চলবে।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধাদের ইসরায়েলে হামলায় নিহত হন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশাপাশি ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে ২৪২ ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিককে সেদিন জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা। তাদের মধ্যে এখনও মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন শতাধিক জিম্মি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার আগ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি অভিযান চলবে। হামাসের হাইকমান্ড জানিয়েছে, তারা দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।
সূত্র: রয়টার্স।
এসএস