কায়রোতে শান্তি আলোচনার মধ্যেই গাজায় বোমা বর্ষণ ইসরায়েলের
গাজা উপত্যকায় শান্তি স্থাপনে উচ্চপর্যায়ে শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছে মিসরের রাজধানী কায়রোতে। হামাসের উচ্চপর্যায়ের নেতারা সেই আলোচনায় উপস্থিত রয়েছেন।
চলমান সেই শান্তি আলোচনার মধ্যেই গাজার দক্ষিণাঞ্চলে বোমা বর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ফিলিস্তিন শাখা জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিস এবং তার পার্শ্ববর্তী দেইর আল বালাহে এলাকায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর গোলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৪১ জন ফিলিস্তিনি।
এমনকি শহরের আল আমাল হাসপাতাল চত্বরেও গোলা ফেলেছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। হাসপাতলটির চত্বরে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিয়েছিলেন।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা দপ্তর জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর গোলা বর্ষণে ঘরবাড়ি হারিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে মিসরে আশ্রয় নেওয়ার জন্য গত তিন দিনে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ ক্রসিংয়ে জড়ো হয়েছেন ১ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি।
শুক্রবার ভোরে রাফাহ ক্রসিংয়েও গোলা বর্ষণ করেছে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। বার্তাসংস্থা এএফপির কাছে থাকা টেলিভিশন ফুটেজে রাফাহ ক্রসিং এলাকায় ধোঁয়ার কুন্ডলি ও আগুন দেখা গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাফাহ ক্রসিংয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই নারী এবং শিশু।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ২১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এই নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী, শিশু,অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক লোকজন।
সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন আরও ৫৪ হাজার ৯৬৮ জন এবং এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৬ হাজার ৭০০ জন।। এছাড়া হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর-সহায় সম্বল হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।
অন্যদিকে, হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশাপাশি, ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে ২৪২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সেদিন জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে গিয়েছিল হামাস যোদ্ধারা।
এই জিম্মিদের মধ্যে ইসরায়েলিদের সংখ্যা ১০৪ জন। বাকি ১৩৬ জনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, রাশিয়া ও ইউক্রেনের নাগরিকরা রয়েছেন; এবং রয়েছেন শিশু, নারী, তরুণ-তরুণী এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধা— সব বয়সী মানুষ।
টানা দেড় মাস ভয়াবহ যুদ্ধ শেষে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নতিস্বীকার করে গত ২৫ নভেম্বর অস্থায়ী বিরতি ঘোষণা করে হামাস-ইসরায়েলি বাহিনী। পরে ১ ডিসেম্বর দু’পক্ষের পারস্পরিক হামলার শুরুর মধ্যে দিয়ে শেষ হয় সেই বিরতি।
৭ দিনের অস্থায়ী বিরতির সময় নিজের কব্জায় আটক জিম্মিদের মধ্যে থেকে ১১৮ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস; বিপরীতে এই সময়সীমায় ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ১৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, এখনও হামাসের কব্জায় রয়েছেন অন্তত ১২৯ জন জিম্মি। কীভাবে তাদের মুক্ত করা হবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান বন্ধ করা এবং সেখানে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে চলতি সপ্তাহে শান্তি সংলাপ শুরু হয়েছে কায়রোতে।
সূত্র : এএফপি
এসএমডব্লিউ