এড়িয়ে চলায় তরুণীকে হাত পা বেঁধে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারল সহপাঠী
এক সময়ের স্কুল সহপাঠীর হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর এক তরুণী। জন্মদিনে চমকে দেওয়ার কথা বলে নির্জন এলাকায় নিয়ে হাত-পা বেঁধে তাকে পুড়িয়ে মেরেছে ওই সহপাঠী। মর্মান্তিক এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তামিলনাড়ুর মাদুরাই এলাকায়। হত্যাকাণ্ডের শিকার তরুণী আর নন্দিনী পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৩ ডিসেম্বর জন্মদিন ছিল আর নন্দিনীর। ব্যক্তিগত জীবনে অযাচিত হস্তক্ষেপ করায় সহপাঠী ট্রান্স-পুরুষ ভেট্রিমারানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তার। কোনও বন্ধু কিংবা অন্যান্য সহপাঠীদের সঙ্গে গল্প কিংবা আড্ডা দিতে বারণ করতো ভেট্রিমারান। এ নিয়ে দু’জনের মাঝে প্রায়ই বাগ-বিতণ্ডা হতো। আর এই অযাচিত হস্তক্ষেপ মেনে নিতে না পারায় দূরত্ব মেনে চলতেন নন্দিনী।
কিন্তু গত ২৩ ডিসেম্বর নন্দিনীর জন্মদিনে তাকে চমকে দেওয়ার কথা বলে তামিলনাড়ুর থালামবারের পোনমার এলাকায় ঘুরতে নিয়ে যায় ভেট্রিমারান। সেখানেই তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়। সহানুভূতিশীল হওয়ায় পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এই তরুণীকে জীবন দিয়ে মূল্য চোকাতে হয়েছে। তবে এক সময়ের স্কুল সহপাঠী তাকে এভাবে হত্যা করতে পারে, তা বিশ্বাসই করতে পারছেন না নন্দিনীর পরিবারের সদস্যরা।
এনডিটিভি বলছে, লিঙ্গ পরিবর্তন করে পুরুষ হওয়া ভেট্রিমারান গত শনিবার সন্ধ্যায় নন্দিনীর জন্মদিনে চমকে দেবে বলে তাকে জানান। পরে তাকে থালামবার থানার পোনমারের নির্জন এক এলাকায় নিয়ে যায়। পুলিশ বলছে, তারপরে তার চোখ বাঁধে ভেট্রিমারান। ‘‘চমক’’ হিসেবে তার হাত ও পায়ে শিকল বেঁধে তার ঘাড় ও কব্জি কেটে ফেলে। এরপর পেট্রোল ঢেলে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় ভেট্রিমারান।
এ সময় তার কান্না শুনে আশপাশ দিয়ে চলাচল করা পথচারীরা পুলিশের কাছে ফোন করেন। পরে সেখান থেকে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তামিলনাড়ুর ক্রোমপেট সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। আহত অবস্থায় ভেট্রিমারানের মোবাইল নম্বর পুলিশকে দিয়েছিলেন নন্দিনী।
তামিলনাড়ু পুলিশের এক কমকর্তা বলেন, ভেট্রিমারানকে ফোন করা হলে নন্দিনীকে শনাক্ত করার জন্য আসে এবং হাসপাতালে কিছু সময় অবস্থানও করে। পরে সেখান থেকে উধাও হয়ে যায়। রোববার ভেট্রিমারানকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছে এই তরুণ।
ভেট্রিমারানের আসল নাম পন্ডি মহেশ্বরী। ২৬ বছর বয়সী ভেট্রিমারান মাদুরাইয়ের একটি স্কুলে নন্দিনীর সাথে পড়তো বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। মহেশ্বরী লিঙ্গ পরিবর্তন করে পুরুষে রূপান্তরিত হওয়ার পর মানবিক দিক বিবেচনা করে তার সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছিলেন নন্দিনী। মাদুরাইয়ের এই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতো এবং এড়িয়ে চলতে শুরু করলে নন্দিনীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ভেট্রিমারান।
পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা বলেছেন, অন্য ছেলে বন্ধুদের সাথে কথা বলতে দেখলে তা নিয়ে নন্দিনীর ওপর খবরদারি করতো ভেট্রিমারান। এ নিয়ে দুজনের মাঝে তর্ক-বিতর্কও হয়। ২৩ ডিসেম্বর নন্দিনীর জন্মদিনের সন্ধ্যায় ভেট্রিমারান আর ঝগড়া করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। জন্মদিন উপলক্ষ্যে তার জন্য চমক রয়েছে বলে সাক্ষাৎ করতে চায় ভেট্রিমারান।
সাক্ষাতের শুরুতে নন্দিনীকে নতুন পোশাক উপহার দেয় সে। পরে তাকে তাম্বারামের কাছে একটি অনাথ আশ্রমে নিয়ে গিয়ে দানও করে। বাড়িতে ফেরার পথে নন্দিনীকে পোনমারের নির্জন এলাকায় নিয়ে যায় ভেট্রিমারান। সেখানে তাকে ‘‘চমক’’ দেওয়ার কথা বলে প্রথমে চোখ বাঁধে। পরে তার হাত-পা বাঁধে। এরপরই নৃশংস হয়ে ওঠে ভেট্রিমারান। ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওই তরুণীর ঘাড় ও হাতের কব্জি কাটে সে। পরে শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
পড়াশোনা শেষে চেন্নাইয়ে গিয়েছিলেন নন্দিনী। সেখানকার একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন তিনি। চেন্নাইয়ের কান্নাগি নগর এলাকায় তার এক চাচার বাসায় থাকতেন। অন্যদিকে, ভেট্রিমারান মাপ্পেদুতে বসবাস করলেও নন্দিনীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতো।
নন্দিনীর বাবা এনডিটিভিকে বলেছেন, নন্দিনী যদি আমাদের বলত কোনও সমস্যা আছে, তাহলে আমরা তাকে সাহায্য করতাম। কিন্তু সে আমাদের কিছু জানায়নি। কেবল সহানুভূতিশীল হওয়ার কারণে নন্দিনীকে তার জীবন দিতে হয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি।
এসএস