মুসলিম-খ্রিস্টান উভয়কেই লক্ষ্য করে নির্বিচারে হামলা করছে ইসরায়েল
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে মুসলিম ও খ্রিস্টান উভয়কেই লক্ষ্য করে ইসরায়েল নির্বিচারে হামলা করছে বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান তীব্র আগ্রাসন এবং ১৯৪৮ সালের নাকবার মধ্যে সাদৃশ্য তুলে ধরতে গিয়ে রোববার (২৪ ডিসেম্বর) এই মন্তব্য করেন তিনি। মাহমুদ আব্বাস বলেন, ইসরায়েলি বোমা হামলা নির্বিচার এবং মুসলিম ও খ্রিস্টান উভয়কেই লক্ষ্য করে এই হামলা চলছে।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রেসিডেন্ট আব্বাস বলেছেন, খ্রিস্টের জন্মস্থান বেথলেহেম (পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি শহর) অভূতপূর্ব বিষণ্ণতার সম্মুখীন হচ্ছে। বর্তমান এই ইসরায়েলি আগ্রাসন তাকে ১৯৪৮ সালের নাকবার কথাই মনে করিয়ে দেয়।
১৯৪৮ সালের মে মাসে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েল রাষ্ট্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর পরপরই প্রায় আট লাখ ফিলিস্তিনিকে নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত করা হয় ও তাদের রাষ্ট্রহীন হওয়ার বিপর্যয় শুরু হয়। আরবিতে এই বিপর্যয়কে বলা হয় ‘নাকবা’।
ফিলিস্তিনিরা প্রতিবছর তাই ১৫ মে দিনটিকে ‘আল-নাকবা’ দিবস হিসেবে পালন করেন। ‘নাকবা’কে ফিলিস্তিনের ইতিহাসে সবচেয়ে দুঃখজনক দিন বলে বিবেচনা করা হয়।
বড়দিনের ছুটি উপলক্ষে আব্বাস বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী ইভানজেলিকাল ব্যাপটিস্ট হাসপাতাল, অর্থোডক্স কালচারাল সেন্টার, গ্রীক অর্থোডক্স চার্চ হল এবং হলি ফ্যামিলি চার্চের পাশাপাশি গাজার মসজিদ, স্কুল এবং হাসপাতালগুলোতেও নৃশংসভাবে বোমাবর্ষণ করেছে এবং ‘এসব হামলা চালানোর সময় একজন মুসলিম এবং একজন খ্রিস্টানের মধ্যে কোনও পার্থক্য করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘খ্রিস্টানরা যেখানে উপস্থিত হয়েছে সেখানে, আমাদের সমস্ত লোক এবং জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে আমাদের ইসলামিক ও খ্রিস্টান পবিত্র স্থানগুলোকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছে দখলদার সেনারা।’
এসময় বড়দিনকে ‘গাজা এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বাকি অংশে আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও আগ্রাসন বন্ধ করার সময়’ হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানান ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণ ‘একটি মুক্ত, স্বাধীন এবং সম্পূর্ণ সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি বাহিনীর টানা আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এই নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।
সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন আরও ৫৪ হাজার ৩৬ জন। এছাড়া হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর-সহায় সম্বল হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।
টিএম