আমরাও এই যুদ্ধের অংশ : হিজবুল্লাহ
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) চলমান যুদ্ধে হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইতোমধ্যে যুদ্ধে নেমে পড়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ইসলামী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ।
রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন এই গোষ্ঠীর অন্যতম মুখপাত্র হাজি মোহাম্মদ আফিফ।
আরটি নিউজকে মোহাম্মদ আফিফ বলেন, ‘আমরা এই যুদ্ধের অংশ হয়ে গেছি। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ— লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়মিত গোলাবর্ষণ।
প্রসঙ্গত, লেবাননভিত্তিক হলেও দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সরাসরি কখনও অংশ নেয় না হিজবুল্লাহ। শক্তিশালী এই গোষ্ঠটির সামরিক বাহিনীতে বর্তমানে ১ লাখেরও বেশি যোদ্ধা রয়েছে। এছাড়াও বাহিনীটির রয়েছে দেড় লাখেরও বেশি স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং লাখ লাখ রকেট-গোলাবারুদের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার।
ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় অভিযান শুরুর পর থেকেই ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে লক্ষ্য করে গোলা-রকেট ছুড়ছে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা। সম্প্রতি তার মাত্রাও বেড়েছে; তবে মোহাম্মদ আফিফ জানিয়েছেন, বর্তমানে হিজবুল্লাহ তার মোট শক্তির মাত্র ৫ শতাংশ ব্যবহার করছে।
‘এটা স্বাভাবিক। এমনকি হামাসও এখন পর্যন্ত তার পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করছে না। আপনি যদি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন রাশিয়াও তার সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করেনি।’
‘এই মুহূর্তে আমাদের কাজ হলো ফিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন ও সংহতি জানিয়ে যুদ্ধের বর্তমান গতির সঙ্গে তাল রেখে চলা। আমরা তা ই করছি,’ আরটি নিউজকে বলেন মোহাম্মদ আফিফ।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালানোর পর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ১৬ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। বিশেষ করে বিমান বাহিনীর নিয়মিত গোলা বর্ষণের কারণে উপত্যকার কোনো ভবনই অক্ষত নেই।
ইসরায়েলি বাহিনীর গত ৭০দিনের টানা অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন মোট ১৮ হাজার ৮০০ জন ফিলিস্তিনি। এই নিহতদের মধ্যে অন্তত ৮ হাজার শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং ৬ হাজার ২০০ জন নারী রয়েছেন। এভাড়া আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৫১ হাজার মানুষ।
অন্যদিকে হামাস যোদ্ধাদের ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশপাশি ইসরায়েল থেকে ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যায় যোদ্ধারা।
এই জিম্মিদের মধ্যে ইসরায়েলিদের সংখ্যা ১০৪ জন। বাকি ১৩৬ জনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, রাশিয়া ও ইউক্রেনের নাগরিকরা রয়েছেন; এবং রয়েছেন শিশু, নারী, তরুণ-তরুণী এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধা— সব বয়সী মানুষ।
এই জিম্মিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১১৮ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বাকি ১৩২ জনের মধ্যে এখনও ১১২ জন জীবিত রয়েছে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে ইসরায়েলি বাহিনী সম্প্রতি এই মর্মে হিজবুল্লাহকে সতর্কবার্তা দিয়েছে যে, যদি গোষ্ঠীটি ইসরায়েলে হামলা অব্যাহত রাখে— তাহলে তা হবে ‘ভয়াবহ ভুল’। কয়েক দিন আগে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াকোভ গ্যালান্ত হিজবুল্লাহকে সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছেন, হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী যদি হামলা বন্ধ না করে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে লেবাননের জনগণকে সেজন্য চরম মূল্য দিতে হবে।
এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে আরটি নিউজকে হাজি মোহাম্মদ আফিফ বলেন, ‘আমরা জানি লেবাননকে কীভাবে রক্ষা করতে হবে।’
আরটি নিউজ
এসএমডব্লিউ