‘দ্বিমুখী’ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসবে না উত্তর কোরিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনও আলোচনা হবে না বলে জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটি বলছে, এই অঞ্চলে সামরিক তৎপরতা জোরদার করার সময় একইসঙ্গে আলোচনার প্রস্তাবও দিচ্ছে ওয়াশিংটন।
আর এই কারণে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘দ্বিমুখী’ বলেও সমালোচনা করেছে পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ’র বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের ক্ষমতাধর বোন কিম ইয়ো জং এবং দেশটির একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার প্রথম গোয়েন্দা উপগ্রহ উৎক্ষেপণের বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অনুষ্ঠিত বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ‘চরম দ্বিমুখীতা’ প্রদর্শন করেছে।
রয়টার্স বলছে, চলতি সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকটি মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড এবং উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত কিম সংয়ের মধ্যে বিরল ও প্রকাশ্য বিবাদের মঞ্চ হয়ে ওঠে। উভয়ই কর্মকর্তাই এই বৈঠকে যুক্তি দিয়ে বলেন, তার দেশের সামরিক কার্যকলাপ প্রতিরক্ষামূলক।
কিম ইয়ো জং বলেছেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনা পুনরায় চালু করার প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেছেন। যদিও পিয়ংইয়ংয়ের মহাকাশ উন্নয়ন কর্মসূচির মতো সার্বভৌম অধিকার অস্বীকার করার ‘ন্যায়সঙ্গত ভিত্তি’ যুক্তরাষ্ট্রের নেই।
এর আগে চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মহাকাশে গোয়েন্দা স্যাটেলাইট পাঠানোর দাবি করে উত্তর কোরিয়া। পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির দাবি, তারা সফলভাবে মালিগিয়ং-১ নামের ওই সামরিক গোয়েন্দা উপগ্রহ মহাকাশে স্থাপন করেছে।
দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন নিজেই এই উৎক্ষেপণ পর্যবেক্ষণ করেছেন বলেও জানানো হয়। উত্তর কোরিয়া এর আগে চলতি বছর দুইবার সামরিক উপগ্রহ কক্ষপথে স্থাপনের চেষ্টা করে এবং ওই দুবারই ব্যর্থ হয়েছিল। সর্বশেষ এই প্রচেষ্টাটি ছিল পিয়ংইয়ংয়ের তৃতীয় কোনও প্রচেষ্টা।
তবে সর্বশেষ এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর সেটিকে উত্তর কোরিয়ার যেকোনও ব্যালিস্টিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাবের লঙ্ঘন বলে নিন্দা করে যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়া।
কিম ইয়ো জং বলেন, উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সংলাপ পুনরায় শুরু করার জন্য পিয়ংইয়ংকে সময় এবং এজেন্ডা ঠিক করতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। তার দাবি, ‘একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব কখনোই আলোচনার এজেন্ডা হতে পারে না এবং সেইজন্য উত্তর কোরিয়া কখনোই সেই উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুখোমুখি বসবে না।’
কিম আরও বলেন, ওয়াশিংটনের ‘দ্বিমুখী পদক্ষেপ’ এবং ‘স্বেচ্ছাচারী কার্মকাণ্ড’ তার দেশের মহাকাশ কর্মসূচির ক্ষতি করতে না পারলেও আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করছে।
উল্লেখ্য, উত্তর কোরিয়া অতীতে কমপক্ষে দুটি স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপন করেছে। এর মধ্যে সর্বশেষটি স্থাপন করা হয়েছে ২০১৬ সালে। কিন্তু ওই দুটি স্যাটেলাইটের কোনোটিই কাজ করছে বলে মনে হয় না।
যদিও পিয়ংইয়ংয়ের দাবি, এই উৎক্ষেপণগুলো উত্তর কোরিয়ার শান্তিপূর্ণ মহাকাশ উন্নয়ন কর্মসূচির অংশ।
টিএম