‘র্যাট-হোল’ মাইনিংয়ে উদ্ধার ৪১ শ্রমিক, কী এই নিষিদ্ধ পদ্ধতি?
ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের উত্তর কাশীতে নির্মাণাধীন টানেল থেকে অবশেষে উদ্ধার করা হয়েছে আটকে পড়া ৪১ শ্রমিককে। দীর্ঘ ১৭ দিন টানেলের ভেতর আটকে ছিলেন তারা।
১২ নভেম্বর ভোরে নাইট শিফট শেষে যখন তারা টানেল থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন এটির একটি অংশ ধসে পড়ে। এরপর শ্রমিকরা আটকে যান। বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারীদের আপ্রাণ চেষ্টায় মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মুক্ত হন তারা।
তাদের উদ্ধারে প্রথমে অ্যাক্সকেভেটর দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু হয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয় আমেরিকান অগার ড্রিলিং মেশিন। এ মেশিন দিয়ে ৬০ মিটার লম্বা পাইপ বসানোর কাজ চলছিল। কিন্তু গত শুক্রবার প্রায় ৪৫ মিটার অংশে পাইপ বসানোর পর মেশিনটি ভেঙে যায়। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হাত দিয়ে উদ্ধার অভিযান সম্পন্ন করা হবে।
সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘটনাস্থলে ডাকা হয় ‘র্যাট-হোল’ মাইনারদের। আর এই র্যাট-হোল মাইনাররাই নিজেদের হাত ব্যবহার করে বাকি কাজটি সম্পন্ন করে শ্রমিকদের কাছে পাইপ পৌঁছে দেন। পরবর্তীতে সেই পাইপের মধ্য দিয়ে বিশেষ চাকাচালিত স্ট্রেচারে করে শ্রমিকদের টেনে টেনে বের করা হয়।
আরও পড়ুন
যে ‘র্যাট-হোল’ মাইনিং কৌশল ব্যবহার করে শ্রমিকদের উদ্ধার করা হয়েছে সেটি ভারতে ২০১৪ সাল থেকে নিষিদ্ধ রয়েছে। এই নিষিদ্ধ কৌশল ব্যবহার করেই আটকে পড়াদের উদ্ধার সম্ভব হয়েছে।
• র্যাট-হোল মাইনিং কী?
র্যাট-হোল মাইনিং হলো একটি কৌশল। যেটির মাধ্যমে খুবই ছোট গর্ত দিয়ে কয়লা উত্তোলন করা হয়। গর্তগুলো চওড়ায় সর্বোচ্চ ৪ ফুট হয়। যখন মাইনাররা ভূগর্ভস্থ কয়লাস্তরে পৌঁছান তখন কয়লা উত্তোলনের জন্য এই টানেল তৈরি করা হয়।
কয়লা উত্তলন করে সেগুলো পাশে কোনো এক জায়গায় জড়ো করা হয়। পরবর্তীতে মহাসড়ক দিয়ে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়। র্যাট-হোল কৌশলে মাইনাররা মাইনের ভেতর প্রবেশ করেন এবং হাতে ধরা সরঞ্জামাদি দিয়ে গর্ত খুঁড়ে কয়লা নিয়ে আসেন। ভারতের মেঘালয় রাজ্যে কয়লা উত্তলনে এটি খুবই সাধারণ ও ব্যাপক ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি। মেঘালয়ে ভূগর্ভস্থ কয়লার স্তর খুবই পাতলা। এছাড়া অন্যান্য পদ্ধতিতে কয়লা উত্তলন লাভজনকও হয় না। এ কারণে সেখানে এ কৌশল ব্যবহার করা হয়।
এ ধরনের ছোট টানেলে মূলত কাজ করানো হয় শিশুদের। দরিদ্রতার কারণে বাধ্য হয়ে শিশুরা এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত হয়।
• কেন নিষিদ্ধ এই পদ্ধতি?
ভারতে ২০১৪ সালে র্যাট-হোল মাইনিং নিষিদ্ধ করে জাতীয় গ্রিন ট্রাইবুনাল। কারণ এ পদ্ধতিটি একটি অবৈজ্ঞানিক পন্থা। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারতে এটির ব্যবহার অহরহ দেখা যায়। এ ধরনের সরু টানেলে আটকে পড়ে বা বন্যার পানি ঢুকে প্রায়ই দেশটিতে মাইনারদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
সূত্র: এনডিটিভি
এমটিআই