রূপান্তরিত ধরন বেশি ভয়ঙ্কর, একজন ছড়াতে পারেন ৯০ জনের দেহে
করোনাভাইরাস নামে পরিচিতি পাওয়া সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের শনাক্ত হওয়া রূপান্তরিত ধরনগুলো মূল ভাইরাসের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি সংক্রামক ও প্রাণঘাতী। চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ক ভারতের সর্বোচ্চ সরকারি প্রতিষ্ঠান অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের (এআইআইএমএস) পরিচালক ডা. রণদীপ গুলেরিয়া সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানিয়েছেন।
ভারতের দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডা. গুলেরিয়া বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা দেশে করোনার উচ্চ সংক্রমণ দেখতে পাচ্ছি। গতবছর মহামারি যখন শুরু হলো, করোনায় আক্রান্ত একজন রোগীর দ্বারা তার আশাপাশের বড়জোর ৩০-৪০ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হতেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। অর্থাৎ, বর্তমানে একজন করোনা পজিটিভ রোগীর দ্বারা আক্রান্তের সংখ্যা ৮০-৯০ শতাংশ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেই হারও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের পাশাপাশি এটির কয়েকটি রূপান্তরিত ধরন শনাক্ত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ধরনগুলো হলো যুক্তরাজ্য ধরন, দক্ষিণ আফ্রিকা ধরন ও ব্রাজিল ধরন।
ভারতের ভাইরাস ও জীবনু বিশেষজ্ঞরা বলছন, দেশের পাঞ্জাব রাজ্যে বর্তমানে রাজত্ব করছে ভাইরাসটির যুক্তরাজ্য ধরন। দিল্লিতে সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার জন্যও এই ধরনটি দায়ী বলে মনে করছেন তাদের একাংশ।
তবে করোনা প্রতিরোধে ভারত সরকারের গঠিত জাতীয় টাস্কফোর্সের অন্যতম সদস্য ডা. রণদীপ গুলেরিয়া মনে করেন, ভারতে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সাম্প্রতিক এই উল্লফনের প্রধান কারণ হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে জনগণের উদাসীনতা।
টাইমস অব ইন্ডিয়াকে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মহামারি যখন শুরু হলো, এখনকার তুলনায় সে সময় সংক্রমণের সংখ্যা ছিল অনেক কম। কিন্তু সে সময় নিয়মিত মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, ঘন ঘন হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধিগুলো জনগণ সত্যিকার অর্থই প্রায় যথাযথভাবে পালন করেছে।’
‘কিন্তু সম্প্রতি যখন সংক্রমণ প্রতিদিনই বাড়ছে, সে সময় জনগণের মধ্যে করোনা স্বাস্থ্যবিধি পালনে উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। দুর্যোগ আরো গভীর হচ্ছে, কারণ হাসপাতালগুলো করোনা রোগীতে ভর্তি হয়ে আছে। শয্যা সংকটের কারণে অনেক গুরুতর অসুস্থ রোগী হাসপাতালে জায়গা পাচ্ছেন না।’
উদ্ভুত সমস্যা সমাধানে কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন ডা. গুলেরিয়া। সাক্ষাৎকারে টাইস অব ইন্ডিয়াকে ভারতের প্রথমসারির এই শ্বাসতন্ত্র বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে কোনো হাসপাতালের কাছাকাছি আবাসিক হোটেলগুলোকে ওই হাসপাতালের বর্ধিত অংশ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। পাশাপাশি শুধু করোনার জন্য একটি বড় কোভিড কেয়ার সেন্টার গড়া প্রয়োজন।’
‘যে পদক্ষেপগুলোর কথা আমি প্রস্তাব করলাম, এগুলো কিন্তু নতুন কোনো আইডিয়া নয়। গতবছর সরকার এই উদ্যোগগুলো নিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে আবারো এই উদ্যোগুলো নেওয়া প্রয়োজন এবং যদি এতে বিলম্ব হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের সামনে ভয়াবহ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।’
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
এসএমডব্লিউ