অভিবাসীদের স্রোতে নীতি বদল করবে জার্মানি?
জার্মানির রাজধানী বার্লিনে প্রতিদিন প্রায় ২০০ অভিবাসী বা শরণার্থী এসে পৌঁছান। তাদের প্রাথমিকভাবে সাবেক একটি বিমানবন্দরের রিসেপশন ফেসিলিটিতে রাখা হয়। কিছুদিনের মধ্যেই তাদের শহরের মধ্যে ফ্ল্যাটে সরিয়ে নেওয়ার কথা।
কিন্তু শহরে আবাসনে এত ফ্ল্যাট পাওয়া দুষ্কর। তাই এই বিমানবন্দরেই চার হাজার মানুষ এক বছর ধরে বসবাস করছেন। আরও আট হাজার মানুষ যাতে থাকতে পারেন, তার ব্যবস্থা হচ্ছে।
জার্মানির অন্য শহরের অবস্থাও বার্লিনের থেকে আলাদা নয়। ২০২৩ সালে দুই লাখ ২০ হাজার অভিবাসন-প্রত্যাশী জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে আশ্রয়ের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেন থেকে অভিবাসীদের ঢল নেমেছে। প্রতিদিন আরও বেশি করে মানুষ নিজেদের নাম নথিভুক্ত করছে।
জার্মানিজুড়েই পুরসভা বা ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলগুলো জানিয়েছে, তারা বুঝতে পারছে না, কী করে এত অভিবাসীকে আশ্রয় দেওয়া যাবে? একে তো এতো মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য উপযুক্ত সংখ্যক বাড়ি বা ফ্ল্যাট নেই, তার ওপর প্রশাসনে কর্মী কম, স্কুলে জায়গা নেই, আতঙ্কিত অভিবাসীদের কাউন্সেলিংয়ের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই।
৫৩ শতাংশ মেয়র বা ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল জানিয়েছে, তাদের ওপর বাড়তি বোঝা চেপেছে। জার্মান অ্যাসোসিয়েশন অব টাউন অ্যান্ড মিউনিসিপ্যালিটিসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, মানুষের মনে অভিবাসন নীতি নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। তিনি জানিয়েছেন, অধিকাংশ জায়গায় অভিবাসীদের জন্য খরচ করার মতো অর্থ নেই।
অভিবাসীদের নিয়ে গবেষণা করছেন বরিস। তার সমাক্ষায় পাঁচভাগের মধ্যে একভাগ মানুষ বলেছেন, অভিবাসীদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক।
জার্মানি ইতোমধ্যে প্রায় আড়াই লাখ অভিবাসন প্রত্যাশীর আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। কিন্তু দুই লাখ মানুষকে ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না, কারণ- হয় কোনো দেশ তাদের নিতে রাজি নয়, অথবা তারা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে এসেছেন বা তাদের শরীর এতাই অসুস্থ যে নিজেদের দেশে চিকিৎসা সম্ভব নয়।
গত অক্টোবরে আরও বেশি সংখ্যায় অবিবাসীদের ফেরত পাঠানোর জন্য সরকার একটি বিল তৈরি করেছিল। কিন্তু প্রতিটি শহর বা পৌরসভায় এখনও অভিবাসনপ্রত্যাশীরা এসে যাচ্ছেন। তাই বরিস মনে করেন, আইন কড়া করেও লাভ নেই।
আরও পড়ুন
কিছু রাজনীতিক দাবি করেছেন, অভিবাসী বা শরণার্থীদের সামাজিক সুরক্ষায় কাটছাঁট করা হোক। ইউরোপের দেশগুলোর তুলনায় জার্মানিতে সামাজিক সুরক্ষার পরিমাণ বেশি বলে মানুষ বেশি করে আসছেন। রক্ষণশীল রাজনীতিকদের মতে, এটাই জার্মানিতে এতো বেশি মানুষের আশ্রয় নেওয়ার কারণ। তাদের হাতে অর্থ দেওয়া উচিত নয়।
যে সব প্রাপ্তবয়স্ক রিসেপশন সেন্টারে আছেন, তারা খাবার পান এবং প্রতি মাসে সর্বাধিক ১৫০ ইউরো হাতখরচ পান। এই হাতখরচের বিষয়টি আইনে উল্লেখ করা আছে এবং আদালত জানিয়ে দিয়েছে, খেয়ালখুশিমতো তা কমানো যাবে না।
অ্যাসোসিয়েশন অব টাইন অ্যান্ড মিউনিসিপ্যালিটিসের বক্তব্য, ইউরোপের অন্য দেশে যে ব্যবস্থা আছে, জার্মানিতেও একই ব্যবস্থা চালু করা উচিত।
টিএম