গাজায় যুদ্ধ চলতে থাকলে যুক্তরাষ্ট্র নিজেও রেহাই পাবে না: ইরান
![গাজায় যুদ্ধ চলতে থাকলে যুক্তরাষ্ট্র নিজেও রেহাই পাবে না: ইরান](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2023October/iran-fm-3-20231027083215.jpg)
টানা তিন সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত চলছে। আর এই সংঘাতের শুরু থেকেই অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হলেও তাতে রাজি নয় যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নতুন করে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ইরান। দেশটি বলেছে, গাজায় যুদ্ধ চলতে থাকলে যুক্তরাষ্ট্র নিজেও এই আগুন থেকে রেহাই পাবে না। গাজায় গণহত্যা চলছে বলেও মন্তব্য করেছে দেশটি।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান। তিনি বলেছেন, গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা বন্ধ না হলে যুক্তরাষ্ট্র নিজেও ‘এই আগুন থেকে রেহাই পাবে না’।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘আমেরিকান রাষ্ট্রনায়কদের যারা এখন ফিলিস্তিনে গণহত্যা পরিচালনা করছে, তাদের আমি অকপটে বলছি, আমরা এই অঞ্চলে যুদ্ধের সম্প্রসারণকে স্বাগত জানাই না। কিন্তু গাজায় গণহত্যা চলতে থাকলে, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) এই আগুন থেকে রেহাই পাবে না।’
প্রসঙ্গত, মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের অত্যাচারের জবাব দিতে গত ৭ অক্টোবর ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে একটি অভিযান চালায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। হামাসের এই অভিযানে কার্যত হতবাক হয়ে পড়ে ইসরায়েল।
হামাসের এই হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৪০০ ইসরায়েলি। নিহতদের মধ্যে ২৮৬ জন সেনাসদস্য রয়েছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। হামাসের হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৪ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি। এছাড়া আরও দুই শতাধিক মানুষকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস।
হামাসের হাতে আটক বিপুল এসব বন্দির মধ্যে ইসরায়েলি-আমেরিকান দ্বৈত নাগরিকও রয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নিজেও গাজায় আটক সব বন্দির নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান বলেছেন, হামাস ইরানকে বলেছে- তারা বেসামরিক বন্দিদের মুক্তি দিতে প্রস্তুত এবং ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ৬ হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য বিশ্বকে চাপ দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘কাতার এবং তুরস্কের সাথে এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানবিক প্রচেষ্টায় ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত রয়েছে ইরান। স্বাভাবিকভাবেই ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ৬ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি নিশ্চিত করাও বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।’
আরও পড়ুন
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। তাদের অবিরাম নির্বিচার এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। এছাড়া ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে ১ হাজার ৭০৯ জন নারী ও ৩৯৭ জন বয়স্ক নাগরিক রয়েছেন।
গত ২০ দিন ধরে চলে আসা এই যুদ্ধে আহত হয়েছেন ১৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলের হামলায় গাজায় একদিনে সর্বোচ্চ ৭৫৬ ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটনা ঘটে গত বুধবার।
এছাড়া ইসরায়েলের বিমান হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার কোনও অবকাঠামো। তারা মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল ও বেসামরিক মানুষের বাড়ি-ঘর সব জায়গায় হামলা চালিয়ে আসছে। একইসঙ্গে গত ৮ অক্টোবর থেকে গাজায় সর্বাত্মক অবরোধও আরোপ করে রেখেছে ইসরায়েল।
টিএম