ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ : অবস্থান পরিবর্তন করছে চীন?
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান যুদ্ধের শুরুতে এই যুদ্ধের জন্য এককভাবে ইসরায়েলকে দায়ী করলেও এখন আর সেই অবস্থানে নেই চীন। অন্তত দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেনের সাম্প্রতিক ফোনালাপে এমন ইঙ্গিতই মিলেছে।
গতকাল সোমবার ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে এলি কোহেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ওয়াং ই। সেই ফোনালাপে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেক দেশেই আত্মরক্ষা অধিকার রয়েছে। তবে সেই অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে আন্তর্জাতিক আইন মানা হচ্চে কি না এবং বেসামরিক লোকজনকে সুরক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে কি না।’
বস্তুত, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর ১৭ দিন পর সোমবারের ফোনালাপে এই প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের পক্ষে কিছু বললেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে হামাসের অতর্কিত হামলার মধ্যে দিয়ে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের শুরুর দিকে এ ঘটনার জন্য ইসরায়েলকে সরাসরি দায়ী করেছিলেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ্যে কোনো কথা বলেননি। তবে গত সপ্তাহে মিশর ও মধ্যপ্রাচ্যের আরব অঞ্চলের অন্যান্য দেশের নেতাদের উদ্দেশে দেওয়া এক বার্তায় বলেছেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব ফিলিস্তিন সমস্যার একটি ব্যাপক, ন্যায্য ও স্থায়ী সমাধানে পৌঁছানো প্রয়োজন আমাদের।’
গত ৭ তারিখ হামাসের হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাল্টা জবাব হিসেবে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী এবং সেই অভিযানে এ পার্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৭ জন ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর ৩ হাজারেরও বেশি।
কিন্তু চীন এই যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করলেও হামাস সম্পর্কে সবসময় নীরব থেকেছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশটির এমন অবস্থান নেওয়ায় হতাশা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের নেতা চাক শুমার সম্প্রতি বলেছেন, ‘ইসরায়েলের এই কঠিন সময়ে চীনের নীরব থাকা এবং ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতি বা সমর্থন না জানানো দুঃখজনক।’
গত ১৩ অক্টোবর বেইজিংয়ে ইসরায়েলের দূতাবাসে চীনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত ঝাই জুনের সঙ্গে বৈঠক করেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্স বিভাগের মহাপরিচালক রাফি হারপেজ। সেই বৈঠকে হারপেজ বলেন, ‘এই যুদ্ধ নিয়ে চীনের দাপ্তরিক বিবৃতি চীনা সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে ইসরায়েল গভীরভাবে হতাশ।’
গত সপ্তাহে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে একটি সাক্ষাৎকার দেন বেইজিংয়ে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস বার্নস। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার নিজস্ব দ্বন্দ্বকে ভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে নিয়ে এসেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতিশীল বলেই চীন ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়েছে।
এদিকে চলতি সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করতে ওয়াশিংটন যাবেন ওয়াং ই। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, সেই বৈঠকের আগে উভয় দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতেই এ যুদ্ধে নিজের অবস্থান নিয়ে কৌশলী হয়েছে চীন।
সূত্র : ব্লুমবার্গ
এসএমডব্লিউ