ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা আরোপে ইরানের আহ্বান
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তেলসহ অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা আরোপে বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর বৃহত্তম জোট ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইরান। একই সঙ্গে মুসলিম দেশগুলো থেকে ইসরায়েলের সব রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের আহ্বানও জানিয়েছে দেশটি। বুধবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসাইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান এই আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার গভীর রাতে গাজার আল-আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় ৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হাসপাতালে ইসরায়েলি এই হামলার পর বুধবার সৌদি আরবের জেদ্দা নগরীতে ওআইসির জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। বৈঠকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা আলোচনা করবেন।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসাইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান ইহুদিবাদী শাসকদের সাথে যারা সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, তাদেরকে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতদের বহিষ্কার করার পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোকে ইসরায়েলের ওপর তেলসহ অন্যান্য নিষেধাজ্ঞাসহ অবিলম্বের আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সংঘটিত সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ সংগ্রহ ও নথিভুক্ত করার জন্য ইসলামিক আইনজীবীদের একটি দল গঠনেরও আহ্বান জানিয়েছেন আমিরআব্দুল্লাহিয়ান। ইসরায়েলের সাথে ইরানের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।
আরব বিশ্বের কয়েকটি দেশের সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগের মাঝে হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হয়েছে গত ৭ অক্টোবর। ইরান শুরু থেকেই এই যুদ্ধ আঞ্চলিক রূপ পেতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে। এমনকি গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ না হলে শিগগিরই ওই অঞ্চলে ইরানের অন্যান্য মিত্র মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান।
মঙ্গলবার গাজার হাসপাতালে বোমা হামলায় ৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই হামলার আগে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছিল, গত ১১ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলের বোমা হামলায় কমপক্ষে ৩ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত ও আরও ১২ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। অন্যদিকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যুদ্ধে ইসরায়েল থেকে প্রায় ২০০ জনকে ধরে নিয়ে জিম্মি করেছে হামাস।
• গাজার হাসপাতালে হামলা ‘অন্য দল করেছে’ বলে মনে হচ্ছে : বাইডেন
ইসরায়েলের তেল আবিবে পৌঁছানোর কয়েক মিনিট পর বুধবার প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে সাথে নিয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তেল আবিবে পৌঁছানোর পর হামাসের সাথে চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতি নিজের সমর্থনও প্রকাশ করেন তিনি।
বাইডেন বলেন, গাজার আল-আহলি হাসপাতালের বিস্ফোরণটি ইসরায়েল নয়, গাজার অন্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠী করেছে বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, গতকাল গাজার হাসপাতালে বিস্ফোরণের ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত এবং ক্ষুব্ধ। আমি যা দেখেছি তার উপর ভিত্তি করে এই হামলা অন্য দল করেছে বলে আমারা মনে হচ্ছে, ইসরায়েল নয়।
নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য শুরু করেন জো বাইডেন। তিনি বলেন, ‘আমি একেবারে সাধারণ একটি কারণে আজ এখানে উপস্থিত হতে চেয়েছিলাম। আমি চাই ইসরায়েলের জনগণ এবং বিশ্বের মানুষ জানুক যে, যুক্তরাষ্ট্র কার পাশে দাঁড়িয়েছে... আমি ব্যক্তিগতভাবে এখানে এসে বিষয়টি পরিষ্কার করতে চেয়েছিলাম।’
মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট বলেন, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস ৩১ আমেরিকানসহ ১ হাজার ৩০০ মানুষকে হত্যা করেছে। এটা কোনো অতিশয়োক্তি নয়, কেবল হত্যা। তারা শিশুসহ অসংখ্য মানুষকে জিম্মি করেছে।
তিনি বলেন, ‘তারা এমন খারাপ এবং নৃশংস কাজ করেছে, যা আইএসের সাথে কিছুটা মিলে যায়।’ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বাইডেন বলেন, ‘আমেরিকানরা আপনাদের সাথে শোক পালন করছে, তারা সত্যিই শোকাহত। আমেরিকানরা চিন্তিত... কারণ তারা জানেন, আপনাকে যা করতে হবে সেটা সহজ হবে না।
তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের সব জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না হামাস। তারা ফিলিস্তিনিদের জন্য কেবল ভোগান্তি এনেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বিশ্ব তাকিয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মতো ইসরায়েলের একটি মানদণ্ড রয়েছে। আমরা কী করতে যাচ্ছি তা তারা দেখতে চাইছে।’
সূত্র: রয়টার্স, আলজাজিরা, টাইমস অব ইসরায়েল।
এসএস