হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে সরাসরি জড়াতে পারে ইরান
ইসরায়েল ও হামাসের মাঝে চলমান যুদ্ধের বিস্তৃতি ঘটলে এই সংঘাতে ইরানের সরাসরি জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এই সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন।
একই সঙ্গে লেবাননের সাথে ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে যুদ্ধের নতুন ক্ষেত্রও তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন জ্যাক সুলিভান। সিবিএস নিউজকে তিনি বলেছেন, ইরান কোনো না কোনোভাবে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার পথ বেছে নেবে। আমরা এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে পারি না। আমাদের সম্ভাব্য সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
গত কয়েক দিন ধরেই লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে সীমান্তজুড়ে ইরান-সমর্থিত লেবানিজ সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সাথে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলা-পাল্টা হামলা চলছে। ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে রোববারও একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ। এতে অন্তত এক ইসরায়েলি বেসামরিক নিহত ও আরও তিনজন আহত হয়েছেন।
লেবাননের দক্ষিণের ওই সীমান্ত এলাকায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী অপর একটি গোষ্ঠীও সক্রিয় রয়েছে। তারাও ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে হামলা এবং অনুপ্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
গত সোমবার থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করায় সেখানে ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। বিদ্যু, পানি, খাবার এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে উপত্যকাজুড়ে। এমন পরিস্থিতিতে গাজার সীমান্ত এলাকায় লাখ লাখ সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম জড়ো করে স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী।
রোববার হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুলিভান গাজার দক্ষিণাঞ্চলে পানির পাইপ সচল করা হয়েছে বলে সিএনএনের স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা তাকে দক্ষিণ গাজায় পানির পাইপ চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কিছুক্ষণ আগে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা তাকে এই বিষয়ে অবগত করেছেন।
• ইসরায়েলি সৈন্যদের সমাধিক্ষেত্রে পরিণত হবে গাজা, হুমকি ইরানের
এদিকে, গাজাকে ইসরায়েলি সৈন্যদের সমাধিক্ষেত্রে পরিণত করার হুমকি দিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আব্দুল্লাহিয়ান। রোববার (১৫ অক্টোবর) কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বৈঠক করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার সঙ্গে সংক্ষিপ্ত এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ইসরায়েলিরা গাজায় ঢুকলে তাদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
তিনি বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু অনেক আশা ও স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু তিনি ও ইরান সরকার এ মুহূর্তে চুপ করে আছে। পারমাণবিক শক্তিসমৃদ্ধ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রেরও কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটন ইসরায়েলে তার পুতুলকে (নেতানিয়াহু) রক্ষায় এগিয়ে এসেছে।’
তিনি হুঁশিয়ারির সুরে বলেছেন, ‘যদি এই যুদ্ধের পরিধি বাড়ে তাহলে যুক্তরাষ্ট্রও বড় ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বে।’
• যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকলেন নেতানিয়াহু
গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান চালানোর আগে সেখানকার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য দফায় আল্টিমেটামের সময় বাড়িয়ে সীমান্তে ব্যাপক সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম জড়ো করেছে ইসরায়েল। অভিযান শুরু করতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এখন কর্তৃপক্ষের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন জরুরি মন্ত্রিসভার বৈঠক আহ্বান করেছেন।
গাজায় ‘হামাসকে ধ্বংস’ করার জন্য নিজেদের প্রস্তুতির পাশাপাশি ইসরায়েলে ও বিদেশে বার্তা পাঠানো এবং স্থল অভিযান নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে এই বৈঠক ডেকেছেন নেতানিয়াহু।
তেলআবিবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সদরদপ্তরে রোববার এই বৈঠক শুরু হয়েছে। নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বৈঠকের শুরুতে হামাসের হামলায় নিহত ১ হাজার ৩০০ ইসরায়েলির স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিটের জন্য নীরবতা পালন করেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
গত সপ্তাহে তার দলের কয়েকজন সদস্যের পাশাপাশি যুদ্ধকালীন জরুরি মন্ত্রিসভায় যোগদানকারী সাবেক বিরোধী আইনপ্রণেতা বেনি গ্যান্তেজকে স্বাগত জানিয়ে বৈঠকে নেতানিয়াহু বলেন, মন্ত্রিসভার সব সদস্যরা ‘একটি ঐক্যফ্রন্টের সাথে দিনের চব্বিশ ঘণ্টা ধরে’ কাজ করে চলছেন।
তিনি বলেন, হামাস ভেবেছিল আমাদের ধ্বংস করবে। কিন্তু আমরাই হামাসকে ধ্বংস করব। ইসরায়েলিদের এই ঐক্য ‘দেশ, শত্রু এবং বিশ্বের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা’ দিচ্ছে।
ইসরায়েলের এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আমাদের সাহসী যোদ্ধাদের দেখেছি যারা এখন সামনের সারিতে রয়েছেন। তারা জানেন গোটা জাতি তাদের পেছনে আছে। তিনি বলেন, তারা দায়িত্বের গভীরতা বোঝে। আমাদের বিরুদ্ধে জেগে ওঠা রক্তখেকো দানবদের নির্মূল করতে তারা যে কোনো মুহূর্তে অভিযান চালাতে প্রস্তুত।
সূত্র: বিবিসি, সিএনএন।
এসএস