যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকলেন নেতানিয়াহু
গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান চালানোর আগে সেখানকার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য দফায় আল্টিমেটামের সময় বাড়িয়ে সীমান্তে ব্যাপক সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম জড়ো করেছে ইসরায়েল। অভিযান শুরু করতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এখন কর্তৃপক্ষের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন জরুরি মন্ত্রিসভার বৈঠক আহ্বান করেছেন।
গাজায় ‘হামাসকে ধ্বংস’ করার জন্য নিজেদের প্রস্তুতির পাশাপাশি ইসরায়েলে ও বিদেশে বার্তা পাঠানো এবং স্থল অভিযান নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে এই বৈঠক ডেকেছেন নেতানিয়াহু।
তেলআবিবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সদরদপ্তরে রোববার এই বৈঠক শুরু হয়েছে। নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বৈঠকের শুরুতে হামাসের হামলায় নিহত ১ হাজার ৩০০ ইসরায়েলির স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিটের জন্য নীরবতা পালন করেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
গত সপ্তাহে তার দলের কয়েকজন সদস্যের পাশাপাশি যুদ্ধকালীন জরুরি মন্ত্রিসভায় যোগদানকারী সাবেক বিরোধী আইনপ্রণেতা বেনি গ্যান্তেজকে স্বাগত জানিয়ে বৈঠকে নেতানিয়াহু বলেন, মন্ত্রিসভার সব সদস্যরা ‘একটি ঐক্যফ্রন্টের সাথে দিনের চব্বিশ ঘণ্টা ধরে’ কাজ করে চলছেন।
তিনি বলেন, হামাস ভেবেছিল আমাদের ধ্বংস করবে। কিন্তু আমরাই হামাসকে ধ্বংস করব। ইসরায়েলিদের এই ঐক্য ‘দেশ, শত্রু এবং বিশ্বের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা’ দিচ্ছে।
ইসরায়েলের এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আমাদের সাহসী যোদ্ধাদের দেখেছি যারা এখন সামনের সারিতে রয়েছেন। তারা জানেন গোটা জাতি তাদের পেছনে আছে। তিনি বলেন, তারা দায়িত্বের গভীরতা বোঝে। আমাদের বিরুদ্ধে জেগে ওঠা রক্তখেকো দানবদের নির্মূল করতে তারা যে কোনো মুহূর্তে অভিযান চালাতে প্রস্তুত।
• গাজা থেকে সরে যেতে ৩ ঘণ্টার সময় দিল ইসরায়েল
এদিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে সরে যাওয়ার জন্য মাত্র তিন ঘণ্টার সময় বেধে দিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। স্থানীয় সময় রোববার রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট করিডোর ব্যবহার করে গাজার উত্তরের বাসিন্দারা দক্ষিণে চলে যেতে পারবেন বলে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে।
রোববার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, ‘গাজা নগরী ও উত্তর গাজার বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা গত কয়েক দিন ধরে দক্ষিণাঞ্চলে চলে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। আইডিএফ রাত ১০টা থেকে মধ্যরাত ১টা পর্যন্ত এই রুটে কোনো অভিযান চালাবে না।
গাজাবাসীর উদ্দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছে, ‘দয়া করে নির্ধারিত এই সময়ে উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণ দিকে যাওয়ার সুযোগ নিন।’
আইডিএফ বলছে, গাজার বাসিন্দা এবং তাদের পরিবারের নিরাপত্তা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দয়া করে আমাদের নির্দেশাবলী মেনে চলুন এবং দক্ষিণ দিকে সরে যান। এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকুন যে, হামাস নেতারা ইতিমধ্যে নিজেদের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।
রোববার সকালের দিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করে। এতে দাবি করা হয়, গাজার বাসিন্দাদের দক্ষিণ দিকে চলে যেতে বাধা দিচ্ছে হামাস। বেসামরিক জনগণকে হামাস মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছে।
এর আগে, গত শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) গাজার উত্তরের বাসিন্দাদের দক্ষিণের দিকে চলে যাওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় ইসরায়েলি বাহিনীর এই আল্টিমেটামের সময়সীমা শেষ হয়। আল্টিমেটামের সময় ফুরিয়ে যাওয়ার পর পরবর্তীতে পদক্ষেপের বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপের বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
গাজা ভূখণ্ডে স্থল, বিমান ও নৌপথে সর্বাত্মক হামলার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। ইতিমধ্যে গাজা সীমান্তে শত শত যুদ্ধ ট্যাংক, সাঁজোয়া যান ও লাখ লাখ সৈন্য সমাবেশ করেছে ইসরায়েল। তবে কখন এই হামলা শুরু করবে সে সম্পর্কে কোনও সুনির্দিষ্ট সময়সীমা জানায়নি ইসরায়েলি বাহিনী।
শনিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি সৈন্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, গাজায় পরবর্তী ধাপের পদক্ষেপ আসছে। শুধু শনিবারই গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন ৩০০ মানুষ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৮০০ মানুষ।
গত সপ্তাহে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালায় এবং এতে প্রায় ১৩০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। বন্দি করা হয়েছে আরও অন্তত দেড়শ জনকে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ইসরায়েল ব্যাপক বোমা বর্ষণ করায় গাজায় নিহত হয়েছেন ২ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনি।
সূত্র: এএফপি, রয়টার্স।
এসএস