ফিলিস্তিনিদের মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে হামাস : বাইডেন
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস সেখানকার সাধারণ ফিলিস্তিনিদের ‘মানববর্ম’ হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফিলিস্তিনের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সঙ্গে এই রাজনৈতিক গোষ্ঠীটির কোনো সম্পর্ক নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
শনিবার রাজধানী ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ মানবাধিকার ও সমকামী অধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ক্যাম্পেইনের নৈশভোজ অনুষ্ঠানে স্ত্রী জিল বাইডেনসহ যোগ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেখানে বক্তব্যও দেন তিনি।
নিজ বক্তব্য বাইডেন বলেন, ‘গাজা উপত্যকার দারিদ্র্য ও অন্যান্য সংকট, বসবাসরত সাধারণ ফিলিস্তিনি ও তাদের পরিবারের সঙ্গে হামাসের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন এবং সম্প্রতি ইসরায়েলে যে হামলা হামাস চালিয়েছে, তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইহুদিদের লক্ষ্য করে পরিচালিত করা সবচেয়ে ভয়াবহ ও নৃশংস আক্রমণ।’
‘তারা হামলা চালিয়েছে এবং এখন পাল্টা হামলা থেকে বাঁচতে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, গত এক সপ্তাহের যুদ্ধে ইসরায়েলে যেসব মার্কিন নাগরিক নিহত ও নিখোঁজ হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে জুম বৈঠকে কথাবার্তা বলেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখজনক স্মৃতিও সামনে আনেন বাইডেন।
‘ইসরায়েলে এখনও যারা নিখোঁজ রয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা নিদারুন যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। তারা এখনও জানেন না— তাদের পরিবারের সদস্যের সঙ্গে কী হয়েছে, সে জীবত রয়েছে কিনা।’
‘আমি তাদের এই যন্ত্রণা অনুভব করতে পারি। যদিও আমার পরিবারের কোনো সদস্য কখনও নিখোঁজ হয়নি, কিন্তু স্বজন হারানোর বেদনা আমি জানি। আমার ছেলে ও পরিবারের অন্যান্য স্বজনদের নিহত ও মৃত্যুর ঘটনা আমি এখনও ভুলতে পারি না।
প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিজের প্রথম স্ত্রী নেইলি হান্টার এবং মেয়ে নাওমি ক্রিস্টিনাকে হারান জো বাইডেন।
প্রায় দুই বছর ধরে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেওয়ার পর গত ৭ অক্টোবর ভোররাতে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে একের পর এক রকেট ছোড়া শুরু করে হামাস এবং সূর্যের আলো ফোটার আগেই ইসরায়েলের দক্ষিণাংশের সীমান্ত বেড়া বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ওই ভূখণ্ডে প্রবেশ করে শত শত সশস্ত্র হামাস যোদ্ধা।
হামাসের হামলায় প্রথম দিনই ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন কয়েকশ ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। এছাড়াও দেড় শতাধিক মানুষকে এদিন জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে গেছে হামাস। এই জিম্মিদের ভাগ্যে কী ঘটেছে— তা এখনও অজানা।
প্রসঙ্গত, বাইডেন যেদিন নৈশভোজের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন, সেই একই দিন সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। সেই বৈঠকে ব্লিনকেন বলেন, ‘হামাস ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ প্রতিনিধি নয়। এটি একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং তাদের একমাত্র এজেন্ডা ইহুদিদের হত্যা করা। বিশ্ববাসী হামাসকে এভাবেই দেখে এবং এই গোষ্ঠী যদি ভবিষ্যতে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চায়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের নিজেদের অবস্থান ও মতাদর্শ সবার সামনে স্পষ্ট করতে হবে।’
সূত্র : এএফপি
এসএমডব্লিউ