ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে ‘ঐতিহাসিক বিজয়’ বলছে ইরান
লক্ষ্য অর্জনে একে অপরকে ‘সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে’ একমত হয়েছে ইরান ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। শনিবার (১৪ অক্টোবর) হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং এরপরই এই বার্তা দেওয়া হয়।
বৈঠকে ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলা নিয়েও আলোচনা করা হয়। এসময় এই হামলাকে ‘ঐতিহাসিক বিজয়’ বলেও আখ্যায়িত করেন ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রোববার (১৫ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহ শনিবার কাতারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের সঙ্গে দেখা করেছেন। হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, কাতারে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে তারা ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর মারাত্মক হামলা নিয়ে আলোচনা করেন এবং ‘হামাসের লক্ষ্য অর্জনে তারা সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে’ সম্মত হয়েছেন।
কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকের সময় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান ইসরায়েলে হামাসের বিস্ময়কর হামলাকে ‘ঐতিহাসিক বিজয়’ হিসাবে অভিহিত করে প্রশংসা করেন। হামাসের এই হামলা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে কার্যত ধাক্কা দিয়েছে।
পৃথক প্রতিবেদনে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর অন্যতম শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া ২০১৯ সালের শেষের দিক থেকে কাতারে বসবাস করছেন। শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকটি দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর ইরানি কর্মকর্তাদের সাথে তার প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক।
— (@halgawi) October 14, 2023
ইরানি মিডিয়ার প্রকাশিত একটি ভিডিওতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদুল্লাহিয়ান এবং হানিয়াকে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাতে আলিঙ্গন, চুম্বন এবং হাসতে দেখা যাচ্ছে। হামাসের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈঠকের সময়, তারা ‘হামাস এবং ফিলিস্তিনি জনগণের লক্ষ্যগুলো সম্পূর্ণরূপে অর্জনে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে’ সম্মত হয়েছেন।
হানিয়া বলেছেন, ‘এই যুদ্ধের পরে নতুন এক ইতিহাস রচিত হবে যা অতীতের মতো হবে না।’
জেরুজালেম পোস্ট বলছে, ইসমাইল হানিয়া ছাড়াও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদুল্লাহিয়ান কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জাসিম আল থানির সাথেও দেখা করেছেন।
তিনি তাকে বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনের জনগণ এবং নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসকদের অপরাধ অব্যাহত থাকলে, এই অঞ্চলের পরিস্থিতি যে একই থাকবে, সেটির গ্যারান্টি কেউই দিতে পারে না।’
এদিকে হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষ কখনও গাজা ছাড়বে না এবং তারা কোথাও পালিয়ে যাবে না। চলমান সংঘাতের মধ্যে শনিবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। আমাদের শত্রুরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ানদের সহায়তায় এ গণহত্যা চালাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাজার বাসিন্দারা তাদের ভূমিতেই রয়েছে। তারা কখনো গাজা ছাড়বে না অথবা (মিসরে) পালিয়ে যাবে না। যেসব ফিলিস্তিনি ইহুদিবাদীদের বর্বর অত্যাচারের মুখোমুখি হচ্ছেন তাদের আমি স্যালুট জানাই। তারা তাদের ভূখণ্ড রক্ষায় বদ্ধপরিকর।’
আরও পড়ুন
হানিয়া বলেন, ‘আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে ইসরায়েল যা করছে তা দ্বিচারিতা এবং মিথ্যায় ভরা। গাজাবাসীকে নির্বিচারে হত্যা করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার সবকিছু দিচ্ছে মার্কিন প্রশাসন।’
পশ্চিমাদের চাপ সত্ত্বেও প্রতিরোধ যোদ্ধারা ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম থেকে পিছপা হবে না বলেও জানান তিনি।
এছাড়া ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের কাছে একটি চিঠি লিখেছেন ইসমাইল হানিয়া। এতে তিনি অভিযোগ করেছেন, দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী যুদ্ধাপরাধ করছে, সঙ্গে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে।
টিএম