গাজায় আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করছে ইসরায়েল
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় জ্বালানি, খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী সরবরাহে ইসরায়েলের অস্বীকৃতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। গাজায় ইসরায়েলের সর্বাত্মক আরোপের মাধ্যমে এই আইনের লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে বুধবার মন্তব্য করেছেন ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক শ্রীনিবাস বুরা।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বুরা বলেছেন, যুদ্ধের প্রথম নীতিই হচ্ছে এটি অবশ্যই যোদ্ধাদের মাঝে সীমিত থাকতে হবে। যখন বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্যবস্তু করা হয় যেমন— গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে; তখন এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, এই নিয়মটি হামাসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য; তাদের বিরুদ্ধে শনিবার ইসরায়েলে আকস্মিক হামলার সময় বেসামরিক লোকজনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে ইসরায়েলের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। তবে গাজা উপত্যকার জনগণকে মৌলিক পণ্যসামগ্রী থেকে বঞ্চিত করতে ইসরায়েলের নেওয়া সিদ্ধান্তটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কারণ ইসরায়েলের অবরোধ আরোপের এই সিদ্ধান্ত উপকূলীয় ছিটমহলের বিরুদ্ধে কার্যকর হিসেবে ভূমিকা পালন করে। এখানে এমন ইতিহাস রয়েছে; যা ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে বিশেষভাবে জঘন্য করে তোলে।
ইসরায়েলের সর্বাত্মক অবরোধের ফলে বুধবার গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে এই উপত্যকা। এর মধ্য দিয়ে গাজা উপত্যকার ২৩ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় দিন পার করছেন। পাশাপাশি হাসপাতাল ও অন্যান্য স্থাপনায়ও প্রয়োজনীয় পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে।
হামাসের হামলার পাল্টায় আত্মরক্ষার জন্য ইসরায়েল এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে ইসরায়েলি যুক্তি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ভারতীয় এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। তবে তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের মাপকাঠির ভিত্তিতে করতে হবে।
এর আগে, সোমবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত গাজায় অবরোধ আরোপের ঘোষণা দিয়ে বলেন, কর্তৃপক্ষ হামাস-অধিকৃত গাজায় ‘সর্বাত্মক অবরোধের’ অংশ হিসেবে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং খাদ্য ও জ্বালানি প্রবেশে বাধা দেবে।
ইসরায়েলি এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী ‘বদমাশ লোকজনের’ বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ হিসাবে সর্বাত্মক অবরোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা গাজাকে পুরোপুরি অবরোধ করছি... বিদ্যুৎ, খাবার, পানি, গ্যাস— সবই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
এর আগে, ২০০৭ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিনি বাহিনীর কাছ থেকে হামাস ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর ইসরায়েল এবং মিসর গাজার ওপর বিভিন্ন ধরনের অবরোধ আরোপ করে।
দীর্ঘদিন ধরে গাজা উপত্যকার ক্ষমতায় রয়েছে হামাস। এই গোষ্ঠী শনিবার (৭ অক্টোবর) ভোরের দিকে আচমকা রকেট নিক্ষেপ শুরু করে ইসরায়েলে। পরে গাজা উপত্যকায় স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে পাল্টা হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। পঞ্চম দিনে পৌঁছানো উভয়পক্ষের চলমান লড়াইয়ে প্রাণহানির সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স।
এসএস