১৭ লাখেরও বেশি আফগান অভিবাসীকে বের করে দিচ্ছে পাকিস্তান
অবৈধভাবে প্রবেশ করা ১৭ লাখ ৩০ হাজার আফগান অভিবাসীকে আগামী ১ নভেম্বরের মধ্যে পাকিস্তান ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার। মঙ্গলবার দেশটির তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আনওয়ার উল হক কাকার এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তত্ত্বাবধায়ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি।
সংবাদ সম্মেলনে বুগতি বলেন, ‘আমাদের কাছে যে কোনো দেশ বা তার নীতির চাইতে পাকিস্তানের নাগরিকদের নিরাপত্তা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের নাগরিকদের জান-মালের নিরাপত্তা রক্ষার্থে এই প্রথম আমরা এমন কোনো আদেশ দিচ্ছি।’
‘আগামী ১ নভেম্বরের মধ্যে সব অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে। ১ নভেম্বরের পর থেকে অভিযানে নামবে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সে সময় যদি কোনো অবৈধ অনুপ্রবেশাকারী ধরা পড়েন, তাহলে তাদেরকে জোর করে নিজেদের দেশে পাঠানো হবে।’
সরফরাজ বুগতি সরাসরি কোনো নাম উল্লেখ না করলেও ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে তিনি যে নিবন্ধনহীন আফগান শরণার্থীদের বুঝিয়েছেন, তা স্পষ্ট। কারণ পাকিস্তানে আফগানিস্তান ব্যতীত অন্য কোনো দেশের লোকজন শরণার্থী হিসেবে বাস করেন না।
সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, যেসব আফগান শরণার্থী সাধারণ পাকিস্তানিদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার জন্য ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার করছেন,
পাকিস্তানে বসবাসরত আফগান শরণার্থীদের একটি অংশ পাকিস্তানে এসেছিলেন ১৯৭৯ সালে, আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর। তারপর ১৯৯৫-৯৬ সালে তালেবান সরকার প্রথমবারের মতো ক্ষমতা দখলের পর শরণার্থী হিসেবে আসেন আরও কয়েক লাখ শরণার্থী। এই শরণার্থীদের অধিকাংশই থাকেন পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তানে।
জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে পাকিস্তানের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে নিবন্ধিত শরণার্থীর সংখ্যা ৮ লাখ ৮০ হাজার জন এবং অনিবন্ধিত শরণার্থী রয়েছেন ১৭ লাখের বেশি, যাদের কাছে কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এই শরণার্থীদেরই ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পাকিস্তান।
বাড়ছে সহিংসতা, দায়ী আফগানরা?
চলতি বছর পাকিস্তানে সম্প্রতি জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলার উল্লম্ফন ঘটেছে পাকিস্তানে। দেশটির থিঙ্কট্যাংক সংস্থা পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের তথ্য অনুসারে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২৭১টি আত্মঘাতী, বোমা, ও বন্দুক হামলা ঘটেছে। এসব হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৮৯ জন, আহত হয়েছেন আরও ৬৫৬ জন।
সংবাদ সম্মেলনে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে সরফরাজ বুগতি বলেন, জানুয়ারি থেকে থেকে জুন মাস পর্যন্ত আফগানিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়েছে ২৪টি। এসবের মধ্যে ১৪টি হামলার জন্য দায়ী পাকিস্তানে বসবাসরত আফগান শরণার্থীরা।
পাকিস্তানের নিষিদ্ধ তালেবানপন্থী দল তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) বিরুদ্ধে এসব হামলা পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে এবং পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এসব হামলার ক্ষেত্রে ব্যপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে নিবন্ধবিহীন আফগান শরণার্থীদের।
পাকিস্তানে সর্বশেষ বড় আকারের জঙ্গি হামলা হয়েছে ঈদে মিলাদুন্নবির দিন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর বেলুচিস্তানের মাসটাং শহরে ঈদে মিলাদুন্নবির মিছিলে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়, সেই হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৫২ জন, আহত হয়েছেন আরও দেড় শতাধিক। একই দিন খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারের একটি মসজিদেও বোমা হামলা হয়েছে, এতে নিহত হয়েছেন আরও ৬ জন এবং আহত হয়েছেন ৪০ জনেরও বেশি। দু’টি হামলাই পরিচালনা করেছে টিটিপি।
টিটিপির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও সম্প্রতি বিভিন্ন সহিংস অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে আফগান শরণার্থীরা। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে কেবল করাচি শহর থেকেই সহিংসতা ও অন্যান্য অপরাধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৭০০ আফগানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অন্যান্য শহর থেকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরও শত শত আফগান শরণার্থীকে।
সূত্র : রয়টার্স, ডন
এসএমডব্লিউ