অনুপ্রবেশ রুখতে জার্মান সীমান্তে বাড়তি নিয়ন্ত্রণ
শরণার্থীদের ঢল শুধু ইতালির মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহির্সীমানার দেশের মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে না, ভূমধ্যসাগর থেকে দূরে থাকা সত্ত্বেও জার্মানির মতো দেশ বিষয়টিকে ঘিরে অভ্যন্তরীণ সংকটের মুখে পড়ছে।
সরকারি সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন প্রায় ৭৮ শতাংশ বেড়ে গেছে।
এছাড়া শুধু আগস্ট মাসেই গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৬ শতাংশ বেশি মানুষ জার্মানিতে প্রবেশ করেছেন। নথিভুক্ত এই সংখ্যার বাইরে আরও মানুষ প্রবেশ করে থাকতে পারেন বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের তিন দলের জোট সরকারের শরিকদের মধ্যে মতপার্থক্য শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় বাধা সৃষ্টি করছে। মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ভরসা হারিয়ে আরও বেশি মানুষ চরম দক্ষিণপন্থি এএফডি দলের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে।
আসন্ন প্রাদেশিক স্তরের নির্বাচনগুলোতে এই দলের আরও উত্থানের আশঙ্কা বাড়ছে। জার্মান পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধী ইউনিয়ন শিবিরও এএফডি-র চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারে, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। শিবিরের অন্যতম নেতা ও বাভেরিয়ার মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোডার শরণার্থী গ্রহণের ঊর্দ্ধসীমা স্থির করার বিতর্কিত প্রস্তাব সম্বল করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছেন।
এমন পরিস্থিতিতে জার্মান সরকার কিছু একটা করে দেখাতে বদ্ধপরিকর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেসার বুধবার বলেছেন, চলতি সপ্তাহেই পোল্যান্ড ও চেক সীমান্তে বাড়তি নিয়ন্ত্রণ শুরু করা হবে। উল্লেখ্য, ২০১৫ সাল থেকেই বাভেরিয়া ও অস্ট্রিয়া সীমান্তে এমন নিয়ন্ত্রণ চালু আছে৷
তার মতে, ইইউয়ের বহির্সীমানায় সুরক্ষার উন্নতি করতে না পারলে রাষ্ট্রজোটের ভেতরের সীমানাগুলো বিপদের মুখে পড়বে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নতুন পদক্ষেপের মাধ্যমে মানবপাচারকারীদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা চালানো হবে।
জার্মানিতে প্রবেশ করা প্রায় এক-চতুর্থাংশ শরণার্থীদের জন্য এমন দুষ্কৃতিরা দায়ী বলে তিনি দাবি করেন। তাদের ধোঁয়াশায় রাখতে ফেসার সরকারের নতুন পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাচ্ছেন না। মঙ্গলবার ভোরে জার্মানির একাধিক অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ফেডারেল পুলিশ পাঁচ জন সিরীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে।
ইউরোপীয় স্তরেও শরণার্থী সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে ঐকমত্য অর্জন করা সহজ হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার ইইউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা ব্রাসেলসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন। রাজনৈতিক আশ্রয় ব্যবস্থার সংস্কারের দুটি আইনের খসড়া আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। বিশেষ করে হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র ও অস্ট্রিয়া অতীতের ঐকমত্য অগ্রাহ্য করে বর্তমান পরিস্থিতিতে আরও কড়া পদক্ষেপের জন্য চাপ দিচ্ছে।
জার্মানির সরকারি জোটের মধ্যে মতপার্থক্য সত্ত্বেও চ্যান্সেলর শলৎস নিজের ক্ষমতার জোরে এক সংকটকালীন বিধির প্রস্তাবের ক্ষেত্রে জার্মানির আপত্তি তুলে নিয়েছেন বলে একাধিক সংবাদমাধ্যম দাবি করছে। অর্থাৎ সবুজ দলের আপত্তি সত্ত্বেও ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে শরণার্থীদের সপরিবারে ৪০ সপ্তাহ পর্যন্ত গৃহবন্দি করে রাখার প্রস্তাবের পথে জার্মানি বাধা দেবে না।
সে ক্ষেত্রে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট রাজনৈতিক আশ্রয়ের সংস্কার সংক্রান্ত আইনের বাকি অংশগুলো নিয়ে আবার তর্কবিতর্ক শুরু করতে পারে। ইউরোপীয় স্তরে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য সম্ভব হলে শেষ পর্যন্ত সব দেশেরই এই সংকট মোকাবিলা করতে সুবিধা হবে বলে সংস্কারের প্রবক্তারা দাবি করছেন।
টিএম