নাগোরনো-কারাবাখের বিচ্ছিন্নতাবাদী সরকারের সাবেক প্রধান আটক
বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী সরকারের সাবেক প্রধানকে আটক করেছে আজারবাইজান। প্রতিবেশী আর্মেনিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় আজারি সেনারা তাকে আটক করে।
এর আগে গত সপ্তাহে সামরিক আক্রমণ চালিয়ে বিচ্ছিন্ন নাগোরনো-কারাবাখের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় আজারবাইজান। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজারবাইজান নাগোরনো-কারাবাখের বিচ্ছিন্নতাবাদী সরকারের সাবেক প্রধান রুবেন ভারদানিয়ানকে গ্রেপ্তার করেছে। গত সপ্তাহে আজারবাইজানের সামরিক অভিযানের পরে এই অঞ্চল থেকে পলায়নরত আরও কয়েক হাজার লোকের সাথে প্রতিবেশী আর্মেনিয়ায় পালানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি।
পরে বুধবার আজারবাইজানের বর্ডার গার্ড সার্ভিস রুবেন ভারদানিয়ানকে গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেয়।
আজারবাইজান সামরিক আক্রমণ চালিয়ে নাগোরনো-কারাবাখের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার পর অঞ্চলটি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন হাজার হাজার জাতিগত আর্মেনিয়ান। আজারবাইজানের নিয়ন্ত্রণে থাকতে অনিচ্ছুক এসব আর্মেনিয়ানদের মধ্যে ৫০ হাজার ইতোমধ্যেই আর্মেনিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন।
আল জাজিরা বলছে, রুবেন ভারদানিয়ান একজন ধন্যাঢ্য ব্যবসায়ী এবং একইসঙ্গে রাশিয়ায় তিনি একটি বড় বিনিয়োগ ব্যাংকেরও মালিক। ২০২২ সালে তিনি নাগোরনো-কারাবাখে চলে আসেন এবং বেশ কয়েক মাস সেখানকার আঞ্চলিক সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অবশ্য চলতি বছরের শুরুতে সেই পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।
ভারদানিয়ানের স্ত্রী ভেরোনিকা জোনাবেন্ড তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেছেন, গত সপ্তাহে আজারবাইজান আক্রমণ চালিয়ে কারাবাখের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেওয়ার পরে জাতিগত আর্মেনিয়ানদের সাথে পালানোর চেষ্টা করার সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুন: নাগোরনো-কারাবাখে আতঙ্ক, পালিয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার আর্মেনীয়
আজারবাইজান ইতোপূর্বে ভারদানিয়ানকে শান্তির পথে বাধা বলে অভিহিত করে তাকে নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। এছাড়া আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানের সাথে তার সম্পর্কও ছিল উত্তেজনাপূর্ণ।
আজারবাইজানের বর্ডার গার্ড সার্ভিস বলেছে, গ্রেপ্তারের পর আঞ্চলিক সরকারের সাবেক প্রধান রুবেন ভারদানিয়ানকে রাজধানী বাকুতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হলেও সেখানে বসবাসকারী ১ লাখ ২০ হাজার জাতিগত আর্মেনিয়ানরা এতোদিন এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে ছিল। বাকু ও ইয়েরেভান কয়েক দশক ধরে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে এবং দেশ দুটি একে অপরের সঙ্গে দুটি যুদ্ধও করেছে।
অবশ্য এই অঞ্চল আজারবাইজান দখলে নেওয়ার পর হাজার হাজার জাতিগত আর্মেনিয়ান নাগোরনো-কারাবাখ থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। কারাবাখ থেকে আর্মেনিয়ার দিকে যাওয়ার রাস্তায় শত শত গাড়ির লাইনও পড়ে গেছে। আজারবাইজান বলছে, তাদের অধীনে কারাবাখের বাসিন্দারা নিরাপদ থাকবে, কিন্তু আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দাবি, সেখানে ‘জাতিগত নির্মূল’ শুরু হয়ে গেছে।
কারাবাখ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৫০ হাজারেরও বেশি লোক চলে গেছে। তবে জাতিগত নির্মূলের আর্মেনিয়ান অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে আজারবাইজান।
আজারবাইজানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেহুন বায়রামভ বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে বলেছেন, তার দেশ জাতিগত সংখ্যালঘুদের সুরক্ষাসহ দেশের সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নাগোরনো-কারাবাখের বাসিন্দাদের ‘সমস্ত অধিকার ও স্বাধীনতা’ নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।
আরও পড়ুন: কারাবাখে আত্মসমর্পণের পর আর্মেনিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ
উল্লেখ্য, নাগোরনো-কারাবাখ আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হিসাবে স্বীকৃত হলেও গত তিন দশক ধরে জাতিগত আর্মেনিয়ানদের শাসনে এই অঞ্চলটি পরিচালিত হয়ে আসছিল। গত সপ্তাহে ককেশাস অঞ্চলের দেশ আজারবাইজানের বিতর্কিত এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান চালায়।
এই ভূখণ্ডের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বাকুর সামরিক অভিযান শুরু করার ২৪ ঘণ্টা পর নাগোরনো-কারাবাখের আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর সদস্যরা আত্মসমর্পণ এবং অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে রাজি হয়। গত সপ্তাহের বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে ওই চুক্তি কার্যকর হয়।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, নাগোরনো-কারাবাখে আর্মেনিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীকে নিরস্ত্র এবং ভেঙে দেওয়া হবে। সর্বশেষ এই সংঘাতে অন্তত ২০০ জাতিগত আর্মেনিয়ান এবং কয়েক ডজন আজারবাইজানি সৈন্য নিহত হয়েছে।
আজারবাইজান বলছে, তারা কারাবাখের জাতিগত আর্মেনিয়ানদের দেশের নাগরিক হিসাবে সমান অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভও এই অঞ্চলে বসবাসরত জাতিগত আর্মেনিয়ানদের অধিকার ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু বছরের পর বছর ধরে চলা সংঘাতে নানা ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং সহিংসতা সেখানে গভীর দাগ ফেলেছে।
মুসলিম প্রধান আজারবাইজান অবশ্য এটিও বলেছে, আর্মেনীয়রা - যারা খ্রিস্টান - তারা চাইলে নাগোরনো-কারাবাখ থেকে চলে যেতে পারে।
টিএম