পৃথিবীর সবচেয়ে বিশুদ্ধ বাতাস মেলে যেসব স্থানে
কলকারখানা, যানবাহন থেকে নিঃসৃত ধোঁয়া ও মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে বাতাসে প্রতিমুহূর্তে বাড়ছে গ্রিনহাউস গ্যাস ও অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা পিএম ২ দশমিক ৫’র উপস্থিতি। ফলে প্রতিদিনই লাগামহীনভাবে বাড়ছে বায়ুদুষণ।
কিন্তু ভয়াবহ এই পরিস্থিতির মধ্যেও এখনও পৃথিবীতে এমন কিছু স্থান রয়েছে, যেসব স্থানে দূষণের আগ্রাসন শুরু না হওয়ায় বাতাস এখনও নির্মল, বিশুদ্ধ। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংস্থা কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিসিরো) সম্প্রতি বিশুদ্ধ বাতাস মেলে— এমন কয়েকটি স্থানের তালিকা তৈরি করেছে।
খুবই সংক্ষিপ্ত সেই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার কেপ গ্রিম উপদ্বীপ। অস্ট্রেলিয়ার দ্বীপরাজ্য তাসমানিয়ার কাছে অবস্থিত এই উপদ্বীপের বাতাসে বিশ্বের সবচেয়ে বিশুদ্ধ বাতাস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সিসিরো।
কেপ গ্রিমের বাতাসের বিশুদ্ধতার একটি বড় কারণ মূল ভূমি থেকে বিচ্ছিন্নতা এবং জনবসতি না থাকা। ‘পৃথিবীর কিনারা’ নামে পরিচিত এই উপদ্বীপে কোনো স্থায়ী জনবসতি নেই। গত কয়েক বছরে কয়েকজন পর্যটক কেপ গ্রিমে পা রেখেছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত সেখানে কেউ স্থায়ীভাবে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেননি।
‘ব্যাপারটি এমন নয় যে বাইরে থেকে দুষণসৃষ্টিকারী গ্যাস ও উপাদান কেপ গ্রিনের বাতাসে প্রবেশ করে না। (দুষণসৃষ্টিকারী উপাদান) প্রবেশ করে ঠিকই, কিন্তু উপদ্বীপটির অবস্থান সাগরের এমন এক এলাকায়— যেখানে প্রতিদিন নিয়মিত দক্ষিণ সাগর থেকে জোর হাওয়া বয়ে যায়। ওই হাওয়ার কারণেই কেপ গ্রিনের বাতাস এত বিশুদ্ধ। তবে সেখানে যদি জনবসতি থাকতো, সেক্ষেত্রে হয়তো বাতাস এত বিশুদ্ধ থাকতো না,’ বিবিসিকে বলেন সিসিরোর জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. আনা স্ট্যাভার্ট।
প্রতিদিন দক্ষিণ মেরুতে অবস্থিত হিমশীতল দক্ষিণ সাগরের বাতাসও খুব ঠাণ্ডা। কেপ গ্রিনের ওপর দিয়ে যখন নির্মল এই বাতাস বয়ে যায় তখন প্রায় সময়েই হাওয়ার গতিবেগ পৌঁছায় ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত। জোর বাতাসের কারণে সাধারণ পর্যটকদের কাছেও কেপ গ্রিন খুব আকর্ষণীয় নয়। কেবল দুঃসাহসি ও অভিযানপ্রিয় পর্যটকরাই যান উপদ্বীপটিতে।
আনা স্ট্যাভার্ট বলেন,‘অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূমি থেকে দূরে ও চারপাশে সমুদ্র থাকায় কেপ গ্রিনের বাতাসে এমনিতেই দূষণসৃষ্টিকারী গ্যাস ও উপাদানের পরিমাণ কম। তার ওপর ওই উপদ্বীপের বাতাসের ৩০ শতাংশই আসে দক্ষিণ সাগর থেকে। এই কারণেই কেপ গ্রিনের বাতাস এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বিশুদ্ধ বাতাস।’
কেপ গ্রিনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাওনা লোয়া ও ম্যাকুয়ারি দ্বীপ, উত্তর মেরুর কাছাকাছি অবস্থিত নরওয়ের মেসালবার্দ শহরের বাতাসও স্থান পেয়েছে সিসিরোর তালিকায়।
সূত্র : এএফপি
এসএমডব্লিউ