লকডাউন বিধি না মানায় ৩০০ বার ওঠবস, অতঃপর মৃত্যু
লকডাউন বিধি না মানায় ফিলিপাইনে এক ব্যক্তিকে শাস্তি হিসেবে ৩০০ বার ওঠবস করিয়েছে পুলিশ। পরদিন মৃত্যু হয়েছে তার। সম্প্রতি ফিলিপাইনের লুজন দ্বীপের কাভিতে প্রদেশের ট্রিয়াস শহরে ঘটেছে এই ঘটনা।
মৃত ওই ব্যক্তির নাম ড্যারেন মানাওগ পেনারেদন্দো। আদ্রিয়ান লুসেনা নামে তার এক আত্মীয় ড্যারেনের মৃত্যুর খবর জানিয়ে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সম্প্রতি একটি পোস্ট দিয়েছেন।
সেখানে বলা হয়,বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টার পর পানি আনতে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। বের হওয়ার পরই পুলিশের ধরে তাকে। তিনি একাধিকবার পুলিশকে বাড়ির বাইরে বের হওয়ার কারণ জানানো সত্ত্বেও পুলিশ তাতে কান না দিয়ে শাস্তি হিসেবে ১০০ বার ওঠবস করার নির্দেশ দেয়।
কিন্তু টানা ১০০ বার ওঠবস করতে ব্যর্থ হওয়ায় ফের তাকে ১০০ বার ওঠবস করতে বলা হয়। এভাবে মোট ৩০০ বার ওঠবস করানো হয় ড্যারেনকে।
শাস্তির মেয়াদ শেষ করে ভোর ৬ টা নাগাদ তিনি যখন বাসায় ফেরেন, তখন দাঁড়িয়ে থাকার মতো অবস্থা ছিলো না তার।
ড্যারেনের স্ত্রী রেইশেলিন বেলসে স্থানীয় পত্রিকাগুলোকে বলেন,‘শুক্রবার পুরো দিন সে উঠে দাঁড়াতে পারেনি; প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করেছে। আমি একবার তাকে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য বলেছিলাম, কিন্তু সে বলল— সামান্য শরীর ব্যাথা, এমনিতেই সেরে যাবে। তারপর আমিও আর উচ্চবাচ্য করিনি।’
কাভিতে প্রদেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া রাজ্যজুড়ে লকডাউন জারি করেছে প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ। সেই অনুযায়ী সন্ধ্যা ৬ টার পর লোকজনকে বাড়িতে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে ড্যারেনের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘হৃদয়বিদারক’ বলে উল্লেখ করে ট্রিয়াস শহরের পুলিশ প্রধান মার্লো সোলেরো বলেন, ‘লকডাউন চলাকালে জনগণকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কেউ যদি সেই নির্দেশ অমাণ্য করেন, সেক্ষেত্রে তাকে শাস্তি দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এসব ক্ষেত্রে যেন সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করা হয় এবং মানুষকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়।’
তিনি বলেন, ‘ড্যারেনের সঙ্গে যা হয়েছে তা শাস্তি নয়, নির্যাতন। আমরা ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি করেছি। দোষী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তুচ্ছ কারণে সাধারণ মানুষদের শাস্তি দেওয়ার নজির অবশ্য ফিলিপাইনে নতুন নয়। দেশটির মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এর আগে সাধারণ মানুষকে পশুর খাঁচায় ঢোকানো কিংবা প্রখর রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখার মত শাস্তি দিয়েছে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সূত্র: বিবিসি
এসএমডব্লিউ