শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির জন্য আশার আলো হয়ে এসেছে ‘এশিয়া কাপ’
ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে অনেকটা ‘অপ্রত্যাশিতভাবেই’ এবারের এশিয়া কাপ আয়োজন করছে শ্রীলঙ্কা। তবে মাত্র এক বছর আগেও অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া দ্বীপ রাষ্ট্রটির ‘অর্থনীতির’ জন্য আশার আলো হয়ে এসেছে এবারের এশিয়া কাপ।
জার্সি বিক্রেতা, হোটেল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় ছোট বাহন টুকটুকের চালকের সঙ্গে কথা বলে শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনটিতে এসএমএস সেনারত্নে নামের এক জার্সি উৎপাদনকারী ও বিক্রেতার জীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরা হয়েছে। যিনি গত দেড়-দুই বছর দেশটির অন্য সব সাধারণ মানুষের মতো কঠিন অর্থনৈতিক সময় পার করেছেন।
জার্সি বিক্রেতা সেনারত্নে জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগেও নিজের তিন সন্তানের মুখে তিন বেলা খাবার তুলে দিতে পারেননি তিনি। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় যখন এশিয়া কাপ শুরু হলো তখন তার বিক্রি বেড়েছে এবং এতে তার কিছুটা অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা এসেছে।
রাজধানী কলম্বোর আর প্রেমাদাসা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বাইরে এ সপ্তাহের শুরুর দিকে আল জাজিরার সঙ্গে কথা হয় সেনারত্নের। সেখানে নিজের সংগ্রামের কথা শোনান তিনি। সেনারত্নে বলেছেন, ‘যখন দুই বছর আগে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয়, এই সংকট আমাদের সব নিয়ে গেছে, আমাদের সঞ্চয়, গাড়ি এবং বাচ্চাদের খাওয়ানোর সক্ষমতাও।’
‘খেলাধুলার সরঞ্জাম বিক্রির সেসব দোকান রয়েছে সেগুলোর চাহিদার ওপর আমাদের পণ্য উৎপাদন ও বিক্রির বিষয়টি নির্ভর করে। কিন্তু ২০২১ সালে যখন অর্থনৈতিক বিপর্যয় শুরু হলো— আমরা আর পর্যাপ্ত অর্ডার পাইনি।’ যোগ করেন সেনারত্নে।
তবে এশিয়া কাপ তার সেই সংকট কিছুটা দূর করেছে। তিনি বলেছেন, যখন তিনি জানতে পারেন শ্রীলঙ্কা এশিয়া কাপ আয়োজন করবে তখনই তিনি কয়েকশ রেপ্লিকা জার্সি ও ক্যাপ উৎপাদন করেন। আর সেগুলো নিয়ে নিজের হোমটাউন গামপাহা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে রাজধানী কলম্বোতে চলে আসেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমি একটি গাড়ি ভাড়া করে আমার স্ত্রী অশোকাকে বলি আমাদের সেখানে যেতে হবে এবং যতটা সম্ভব এসব পণ্য বিক্রি করতে হবে।’ সেনারত্নে যখন এসব কথা বলছিলেন তখন তার স্ত্রী কাস্টমারদের সঙ্গে জার্সি নিয়ে দরদাম করছিলেন।
সেনারত্নে জানিয়েছেন, ক্যান্ডিতে ভারত-পাকিস্তানের প্রথম ম্যাচের আগে তিনি তার উৎপাদিত সব জার্সি বিক্রি করে ফেলেন এবং সঙ্গে করে ভালো পরিমাণ অর্থ নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
তিনি বলেছেন, ‘সব খরচ বাদ দিয়ে, আমাদের আরও অনেক অর্থ রয়ে গিয়েছিল।’ আর ওই ম্যাচের আগে সব জার্সি বিক্রি করে ফেলায় দ্বিতীয় রাউন্ডের আগে আরও জার্সি তৈরি করেন তিনি।
এই জার্সি বিক্রেতা আল জাজিরাকে আরও বলেছেন, ‘যদি রোববার পর্যন্ত আমাদের ব্যবসা ভালো যায়, তাহলে আমরা খুশি হয়ে এবং বাচ্চাদের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারব।’
অপরদিকে টুকটুক চালক ডব্লিউ নিশান্থাও প্রায়ই একই গল্প শুনিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, পরিবার নিয়ে তিনি প্রতিদিনই সংগ্রাম করছেন। তবে রাজধানী কলম্বোতে ক্রিকেট ভক্তরা জড়ো হওয়ায় এখন তাদের ব্যস্ততা বেড়েছে এবং বেঁচে থাকার জন্য যে অর্থ প্রয়োজন সেটি পাচ্ছেন।
রাহিনি দি সিলভা নামের এক হোটেল রিসিপশনিস্ট আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, এশিয়া কাপ বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগে তাদের সব রুম বুক হয়ে গিয়েছিল। এখন ভারত আবার ফাইনালে উঠায় তাদের রুমের ডিমান্ড আবারও বেড়ে গেছে। তিনি বলেছেন, ‘ভারত এখন ফাইনালে। আমরা এই রোববারের জন্যও হোটেল রুম বুক করার জন্য কল পাচ্ছি।’
এদিকে শেষ চারের ডু অর ডাই ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে আয়োজক দেশ শ্রীলঙ্কাও। কাল রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানী কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে এ দুই দেশ।
সূত্র: আল জাজিরা
এমটিআই