মোদির সঙ্গে বৈঠকে ভারতে মানবাধিকারের প্রসঙ্গ তুলেছেন বাইডেন
জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিতে ভারতে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সম্মেলনের আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাইডেন বৈঠক করেন এবং সেখানেই ভারতে মানবাধিকারের প্রসঙ্গটি তোলেন তিনি।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন- তিনি দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে ভারতে মানবাধিকার এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের গুরুত্বের মতো বিষয়গুলো উত্থাপন করেছেন। বাইডেন জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতের রাজধানীতে ছিলেন এবং সেখানে মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করেন তিনি।
পরে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেই রোববার ভিয়েতনামের উদ্দেশে ভারত ত্যাগ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বিবিসি বলছে, মানবাধিকার কর্মী এবং গোষ্ঠীগুলো নরেন্দ্র মোদির অধীনে ভারতের মানবাধিকারের ক্রমবর্ধমান অবনতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ২০১৪ সালে মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতে সংখ্যালঘুদের ওপর, বিশেষ করে মুসলমানদের ওপর আক্রমণ বেড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে থাকে মোদির সরকার।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মোদির কাছে ভারতে মানবাধিকারের প্রসঙ্গ তোলার বিষয়ে এসব মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। সেখানে তিনি বলেন, ভারত-মার্কিন সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে মোদির সঙ্গে ‘গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা’ করেছেন তিনি।
মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এবং সবসময়ের মতো এবারও আমি মানবাধিকারকে সম্মান করার মতো গুরুত্বপূর্ণ (বিষয়) এবং শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সুশীল সমাজ ও মুক্ত গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার বিষয়টি মোদির কাছে উত্থাপন করেছি।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)-এর প্রকাশিত সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম সূচকে গত বছরের তুলনায় ভারতের ১১ ধাপ অবনতি হয়েছে এবং বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬১তম অবস্থানে নেমে গেছে। চলতি বছরের মে মাসে এই সূচক প্রকাশিত হয়।
বিবিসি বলছে, মানবাধিকার কর্মীরা এসব বিষয় মোদির কাছে উত্থাপন করার জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ পশ্চিমা নেতাদের কাছে আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের উত্থান রোধে ওয়াশিংটন ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র বলে মনে করে থাকে এবং এই কারণে ভারতকে সমালোচনা করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সতর্কভাবে এগোবে।
এর আগে চলতি বছরের মে মাসে ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্বের কারণে ভারতকে আবারও কালো তালিকায় রাখার সুপারিশ করে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীন একটি কমিশন। ২০২২ সালজুড়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব করার দায়ে ভারতের বিরুদ্ধে এই সুপারিশ করা হয়।
এ নিয়ে টানা চার বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারের বিরুদ্ধে এই সুপারিশ করা হলো।
ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) বলেছে, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত সরকার ২০২২ সালে জাতীয়, রাজ্য এবং স্থানীয় পর্যায়ে ধর্মীয় বৈষম্যমূলক নীতির প্রচার ও প্রয়োগ করেছে। এর মধ্যে ধর্মান্তরকরণ বা ধর্মপরিবর্তন, হিজাব পরা এবং গোহত্যাকে লক্ষ্য করে আইন প্রণয়নও রয়েছে। আর এই ধরনের পদক্ষেপ মুসলমানদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টিসহ খ্রিস্টান, শিখ, দলিত, আদিবাসী ও তফসিলি উপজাতিসহ আন্তঃধর্মীয় সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
স্বাধীন মার্কিন এই প্যানেলটি জোর দিয়ে জানায়, নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বে ভারত সরকার দেশটিতে সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরকে দমন করে চলেছে। বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং যারা তাদের পক্ষে সমর্থন করছে তাদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালানো হচ্ছে।
সোমবারের প্রতিবেদনে বিবিসি বলেছে, নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে একক কোনও সংবাদ সম্মেলন করেননি এবং বাইডেনের সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠক বা নৈশভোজের পরে এ বিষয়ে নেতাদের প্রশ্ন করার জন্য সাংবাদিকদের আমন্ত্রণও জানানো হয়নি।
বৈঠকের পরে ভারতের জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উভয় নেতা বেশ কয়েকটি বিষয়ে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া মানবাধিকার ইস্যুতে সেখানে কথোপকথন হয়েছিল কিনা তা উল্লেখ করা হয়নি।
টিএম