ড. ইউনূসের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ ইউনূসকে বিচারের নামে হয়রানি করা হচ্ছে— অভিযোগ তুলে কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি দিয়েছেন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ ১৭৫ জন বিশ্বনেতা।
এবার একই ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অঙ্গসংস্থার (ইউএনএইচসিএইচআর) হাই কমিশনার ভলকার তুর্ক। এক বিবৃতিতে তিনি অভিযোগ করেছেন, ড. ইউনূ, মানবাধিকারকর্মী আদিলুর রহমান খান ও নাসিরউদ্দিন এলানসহ অন্যান্য মানবাধিকারকর্মীদের বাংলাদেশে আইনী প্রক্রিয়ায় ‘নিরবিচ্ছিন্নভাবে হয়রানি’ করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় ইউএনএইচসিএইচআরের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন সংস্থার দুই মুখপাত্র রাভিনা শ্যামদাসানি এবং মার্থা হুরতাডো। সংবাদ সম্মেলনে হাইকমিশনারের বিবৃতি পড়েও শুনিয়েছেন তারা।
বিবৃতিতে ড. ইউনূস সম্পর্কে ভলকার তুর্ক বলেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ড. মুহম্মদ ইউনূসকে গত এক দশক ধরে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। বর্তমানে তিনি যে দু’টি মামলায় বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন যেগুলোতে তার কারাদণ্ড হতে পারে, একটি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং দ্বিতীয়টি দুর্নীতির অভিযোগ।
'প্রফেসর ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সুপরিচিত। তিনি আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন।'
‘কিন্তু তার বিরুদ্ধে লাগাতারভাবে মানহানিকর প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে চালানো হচ্ছে এসব প্রচারণা। এটাই আমাদের উদ্বেগের প্রধান ইস্যু। এ ধরনের নেতিবাচক প্রচার-প্রচারণা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ন্যায়বিচারের সম্ভাবনাকে দূরে ঠেলে দেয়।’
বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণ ও নিরাপত্তায় কাজ করে যেতে মানবাধিকারকর্মী ও অন্যান্য সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের জন্য নিরাপদ ও সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক।
তিনি বলেন, 'মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের নেতা আদিলুর রহমান খান ও নাসিরুদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে চলমান মামলা জাতিসংঘ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, যেগুলোর রায় ৭ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সঙ্গে ১০ বছর আগের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সম্পর্ক রয়েছে।'
যথাযথ প্রক্রিয়া এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে এই মামলাগুলোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পর্যালোচনা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন হাইকমিশনার।
বাংলাদেশের নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনটিও জাতিসংঘ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভলকার তুর্ক বলেন, 'নতুন আইনটিতে কারাদণ্ডের পরিবর্তে জরিমানা রাখ হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি অপরাধের জন্য জামিনের সুযোগ থাকবে। তবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে আটকাতে আইনের স্বেচ্ছাচারী ব্যবহার রোধ করতে সব উদ্বেগের সমাধান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'
এসএমডব্লিউ