তাইওয়ানে ৩০ হাজার পরিবার বিদ্যুৎহীন, বাতিল আরও ২০০ ফ্লাইট
তাইওয়ানে আঘাত হেনেছে শক্তিশালী টাইফুন হাইকুই। রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় বিকেলে এই টাইফুন ভূখণ্ডটির পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে। টাইফুনের জেরে ৩০ হাজারেরও বেশি পরিবার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার শহর ও কাউন্টিগুলোতে স্কুল এবং দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। সোমবারও (৪ সেপ্টেম্বর) প্রায় ২০০ অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাইওয়ানের পূর্ব এবং দক্ষিণাঞ্চলে টাইফুন হাইকুই আছড়ে পড়ার পর ৩০ হাজারেরও বেশি পরিবার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যদিও বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় স্বাভাবিক করতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ।
রয়টার্স বলছে, রোববার বিকেলে তাইওয়ানের সুদূর দক্ষিণ-পূর্বে পাহাড়ি এবং অল্প জনবসতিপূর্ণ এলাকায় আছড়ে পড়ে টাইফুন হাইকুই। গত চার বছরের মধ্যে তাইওয়ানে সরাসরি আঘাত হানা প্রথম টাইফুন এটি। পরে টাইফুনটি দ্বীপের দক্ষিণ অংশে চলে যায়।
তাইওয়ানের রাষ্ট্র-চালিত ইউটিলিটি তাইপাওয়ার জানিয়েছে, হাইকুই আছড়ে পড়ার পর ২ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি পরিবারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে এর মধ্যে বেশিরভাগেরই সংযোগ পুনরায় চালু করা সম্ভব হলেও এখনও ৩৪ হাজারের কম পরিবার বিদ্যুৎহীন রয়েছে। সোমবার পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন থাকা পরিবারগুলোর প্রায় অর্ধেকই তাইতুংয়ের পূর্বাঞ্চলীয় কাউন্টির।
এদিকে টাইফুন হাইকুইয়ের জেরে দক্ষিণ, পূর্ব ও মধ্য তাইওয়ানজুড়ে বিভিন্ন কাউন্টি ও শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস বাতিল এবং সোমবার শ্রমিকদের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া সোমবারও রাজধানী তাইপেইতে বিক্ষিপ্তভাবে দমকা বৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বের বৃহত্তম চিপ প্রস্তুতকারক তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং বলেছে, তাইওয়ানে তাদের প্ল্যান্টগুলো স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে এবং টাইফুনের আঘাতে সেগুলো কোনও ক্ষতির মুখে পড়েনি। তাইওয়ানের ফায়ার ডিপার্টমেন্ট টাইফুনের জেরে পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে। তবে এতে কোনও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
তাইওয়ানের সরকার বলছে, হাইকুই আছড়ে পড়ার আগে দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলসহ কিছু এলাকা থেকে ৭ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এছাড়া টাইফুন হাইকুইয়ের আঘাতের শঙ্কায় রোববার তাইওয়ানে অভ্যন্তরীণ সকল ফ্লাইট বাতিল করা হয়।
ফ্লাইট বাতিলের সেই ধারাবাহিকতা সোমবারও অব্যাহত রয়েছে। রয়টার্স বলছে, তাইওয়ানের এয়ারলাইন্স সোমবার ১৮৯টি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল করেছে। তাইওয়ানের আশপাশের দ্বীপগুলোতে ফেরি পরিষেবাও স্থগিত করা হয়েছে।
এই দ্বীপ ভূখণ্ডের সিভিল অ্যারোনটিক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলেছে, তাইওয়ানের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে তেমন ব্যাঘাত ঘটেনি। শক্তিশালী এই টাইফুনের কারণে তাইওয়ানের কেবল ২৩টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। তাইওয়ানের সেন্ট্রাল ওয়েদার ব্যুরো জানিয়েছে, সোমবার সকাল থেকে হাইকুই তাইওয়ান প্রণালীতে প্রবেশ করে চীনের দিকে যেতে শুরু করেছে। তবে এই টাইফুনের প্রভাবে সপ্তাহের মাঝামাঝি পর্যন্ত তাইওয়ানজুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।
এদিকে টাইফুন হাইকুইয়ের জেরে সোমবার ভোরে চীনের বিভিন্ন এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। চীনা রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দেশটির উপকূলীয় প্রদেশ ফুজিয়ান ও গুয়াংডংয়ের আশপাশে প্রবল বাতাস ও বিশাল ঢেউয়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সমুদ্রে চলাচলরত জাহাজগুলোকেও সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
টিএম