জনপ্রিয়তা বাড়লেও এখনও মোদির ধারেকাছে নেই রাহুল : জরিপ
খুচরা বাজারে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্বের কারণে জনপ্রিয়তায় খানিকটা ভাঁটা পড়লেও এখনও ভারতের শীর্ষ জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা নরেন্দ্র মোদি। দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ আগামী ২০২৪ সালের নির্বাচনে মোদিকে জয়ী হিসেবে দেখতে আগ্রহী।
অন্যদিকে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধী গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন সম্প্রতি, কিন্তু নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তার ধারে কাছে পৌঁছাতে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে তাকে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে’র সাম্প্রতিক জরিপের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থ রয়টার্স।
বছরে দু’বার ভারতের ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের জনপ্রিয়তা যাচাই বিষয়ক এই জরিপ পরিচালনা করে ইন্ডিয়া টুডে। প্রথম জরিপটি হয় ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং দ্বিতীয়টি ১৫ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত। জরিপের তথ্য সংগ্রহের কাজ পুরোটাই হয় অনলাইনে।
যে জরিপের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে রয়টার্সের এ প্রতিবেদনটি করা হয়েছে, সেটি দ্বিতীয় অর্থাৎ জুলাই-আগস্ট মাসে পরিচালনা করা হয়েছিল।
প্রায় ২ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বা ভোটার অংশ নিয়েছেন ইন্ডিয়া টুডের জুলাই মাসের জরিপে। জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে জানা গেছে ভারতের ৫৯ শতাংশ ভোটার মনে করেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদিই সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি। তারা আরও চান, আগামী ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপি জয়ী হয়ে সরকার গঠন করুক এবং সেই সরকারের প্রধান করা হোক নরেন্দ্র মোদিকে।
এছাড়া জুলাই-আগস্ট জরিপে অংশ নেওয়া ভোটারদের ৬৩ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির পারফরম্যান্সে খুশি। এই হারও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির জরিপের চেয়ে কম। সেই জরিপে প্রধানমন্ত্রী মোদির পারফরম্যান্সে সন্তুষ্টি জানিয়েছিলেন ৭২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।
অন্যদিকে, এবার জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রায় উল্লম্ফণ ঘটেছে কংগ্রেসের বর্তমান শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধীর। সাম্প্রতিক জরিপে অংশ নেওয়া ৩২ শতাংশ ভোটার মনে করছেন, কংগ্রেসের ভবিষ্যত কান্ডারি হিসেবে রাহুল গান্ধীই সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি। এছাড়া ২৪ শতাংশ ভোটার জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তারা রাহুল গান্ধীকে দেখতে চান।
এই প্রথম সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এই পরিমাণ জনপ্রিয়তা অর্জন করলেন রাহুল। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির জরিপে মাত্র ১৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী রাহুলকে দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উপযুক্ত বলে রায় দিয়েছিলেন।
ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক ‘ভারত জোড়ো’ পদযাত্রা ও ২৬টি বিরোধী দলের সমন্বয়ে গঠিত রাজনৈতিক জোট ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স বা ইনডিয়া জোটের জেরে সাধারণ ভোটারদের কাছে বেড়েছে রাহুলের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা। এছাড়া ভারতের খুচরা বাজারে বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি এবং কর্মসংস্থান সংকটও এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
প্রসঙ্গত, গত জুলাই ভারতের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের খুচরা বাজারে মূল্যস্ফীতির গড় হার ছিল ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ, যা গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
আর খাদ্যপণ্যের খুচরা বাজারে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। এই হার গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বেকারত্ব পরিস্থিতিও দিন দিন উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে ভারতে। দেশটির কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রতিবছর কর্মক্ষম নারী-পুরুষের বৃদ্ধির যে হার, ততে আগামী ১০ বছরে দেশজুড়ে অন্তত ৭ কোটি নতুন কর্মসংস্থান প্রয়োজন।
কিন্তু কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর বৃদ্ধির হারের বিপরীতে এই সময়সীমায় সর্বোচ্চ ২ কোটি ৪০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হতে পারে বলে জানিয়েছে পরিসংখ্যান দপ্তর।
মোদির আমলে গত ১০ বছরে ভারতে কল্যাণমুখী অর্থনীতি, অবকাঠামো বিকাশের পাশাপাশি শক্তিশালী হয়েছে কট্টর হিন্দুত্বপন্থী জাতীয়তাবাদও। বিরোধীদের অভিযোগ, গত দশ বছরে বিরোধীদের দমনের জন্য নানাভাবে আইন ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবহার ও অপব্যবহার করেছে বিজেপি সরকার।
ভারতের পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন হবে আগামী ২০২৪ সালের মে। দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার মোট আসনসংখ্যা ৫৪২টি। ইন্ডিয়া টুডের জরিপ বলছে, যদি এই মুহূর্তে নির্বাচন হয়— সেক্ষেত্রে অন্তত ২৮৭টি আসনে জয়ী হবেন বিজেপি প্রার্থীরা।
এসএমডব্লিউ