ভারতের চন্দ্র বিজয়ের নেপথ্যে যারা
ইতিহাস গড়েছে ভারতের নভোযান ‘চন্দ্রযান ৩’। গত ১৪ জুলাই ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটা শহরের সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে ৪০ দিন পর, আজ ২৩ আগস্ট চাঁদের দক্ষিণমেরুর মাটি স্পর্শ করেছে চন্দ্রযান ৩।
বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে সফল চন্দ্রাভিযান পরিচালনা করল ভারত। এর আগে মাত্র ৩ টি দেশ চাঁদে নভোযান পাঠাতে পেরেছে— যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন। তবে তারপরও ভারতের এই অভিযান অন্য ৩ দেশের চেয়ে স্বতন্ত্র; কারণ ভারতের চন্দ্রযান ৩ প্রথম নভোযান, যেটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করতে পেরেছে।
চন্দ্রযান ৩ প্রস্তুত করতে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (ইসরো) সময় লেগেছে ৪ বছর। এমনকি করোনা মহামারির সময়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও যখন দিনের পর দিন লকডাউন চলছে, তখনও থেমে থাকেনি চন্দ্রযান ৩ তৈরির কাজ। ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, প্রায় ১ হাজার প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীর নিরলস পরিশ্রমের ফসল এই চন্দ্রযান ৩ প্রস্তুত এবং সেটি চাঁদে পাঠানো বাবদ ব্যয় হয়েছে ৭০০ কোটি রুপি।
ভারতের এই চন্দ্র বিজয়ের নেপথ্যে যারা কাজ করছেন, তাদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে এনডিটিভি।
ইসরো’র চেয়ারম্যান এস সোমনাথ
ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার চেয়ারম্যান এস সোমনাথ পড়াশোনা করেছেন মহাকাশযান প্রকৌশল বিদ্যায়। ভারতের বিজ্ঞান শিক্ষা বিষয়ক শীর্ষ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের সাবেক ছাত্র এস সোমনাথ চন্দ্রযান ৩’র প্রস্তুত প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে বুধবার সেটির চাঁদে নামা পর্যন্ত গোটা মিশনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর পাশপাশি মার্ক-৩ বা বাহুবলি রকেটের নকশা প্রস্তুত করেছেন তিনি। এই বাহুবলি রকেটই চন্দ্রযান ৩কে চাঁদের কক্ষপথে ঢুকতে সহয়তা করেছে।
ইসরোকে নেতৃত্ব দেওয়া ও মহাকাশ গবেষণার পাশাপাশি ছোটোগল্প লেখার প্রতি ঝোঁক রয়েছে এস সোমানাথের।
ভীরামুথুভেল
চন্দ্রযান ৩ অভিযানের প্রকল্প পরিচালক ভীরামুথুভেলের গত চার বছরে জীবন কেটেছে কেবল এই অভিযানের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা খুঁটিনাটি কাজের পেছনে। চেন্নাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রযুক্তিবিদ্যায় মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করা ভীরামুথুভেল এর আগে চন্দ্রযান ২ মিশনের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ভারতের চাঁদের মাটি স্পর্শ করার দ্বিতীয় মিশন ছিল সেটি।
২০১৯ সালে পরিচালিত সেই মিশন অবশ্য ব্যর্থ হয়েছিল, কিন্তু সেটির অভিজ্ঞতা তিনি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছেন পরবর্তী নভোযান প্রস্তুতের ক্ষেত্রে। চাঁদের মাটিতে চন্দ্রাভিযান ৩’র সফল অবতরণ তারই প্রমাণ।
কল্পনা কে
ইসরোর কর্মকর্তা কল্পনা কে মূলত একজন স্যাটেলাইট প্রকৌশলী। ইসরোর এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তার জীবন প্রায় উৎসর্গ করেছেন বিভিন্ন স্যাটেলাইট নির্মাণের কাজে। চন্দ্রযান ৩ টিমের একজন অপরিহার্য সদস্য কল্পনা ছিলেন চন্দ্রযান ২ টিমেও।
এম ভানিথা
পেশায় ইলেকট্রনিক্স সিস্টেমস প্রকৌশলী এবং বেঙ্গালুরুর ইউআর রাও স্যাটেলাইট সেন্টারের উপ পরিচালক এম ভানিথা চন্দ্রযান ২ মিশন টিমের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। চন্দ্রযান ৩ মিশন টিমেও একই পদে আছেন এই নারী। ব্যক্তিগত জীবনে বাগান করতে ভালবাসেন এম ভানিথা।
এম শঙ্করণ
পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করা ইসরো কর্মকর্তা এম শঙ্করণ তার কার্যালয়ে ‘পাওয়ার হাউস’ নামে পরিচিত। গত তিন দশকেরও বেশি সময় স্যাটেলাইট নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এম শঙ্করণ মূলত নভোযানের জ্বালানি ও পাওয়ার সিস্টেম বিশেষজ্ঞ। ২০০৮ সালে চন্দ্রযান ১ মিশন টিমের সদস্য শঙ্করণ চন্দ্রযান ২ টিমেরও সদস্য ছিলেন।
ভি নারায়ানান
তরল জ্বালানিচালিত উড়োজাহাজ ও মহাকাশযানের ইঞ্জিন বিশেষজ্ঞ ভি নারায়ানান চন্দ্রযান ৩ মিশন টিমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য। এই চন্দ্রযানের ল্যান্ডার বিক্রমের চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের দায়িত্বে ছিলেন তিনি এবং এক্ষেত্রে তিনি সম্পূর্ণ সফল। খড়গপুর আইআইটির সাবেক ছাত্র ভি নারায়ানান ক্রয়োজেনিক যন্ত্রেরও বিশেষজ্ঞ।
এসএমডব্লিউ