রাশিয়ার বিরুদ্ধে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করছে ইউক্রেন
রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করা শুরু করেছে ইউক্রেন। যুক্তরাষ্ট্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। যদিও বিশ্বের শতাধিক দেশে এই বোমা নিষিদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া এই ধরনের অস্ত্র কিয়েভ ব্যবহার করলে ইউক্রেনেও পাল্টা ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের হুমকি দিয়েছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
শুক্রবার (২১ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন দেশটিতে রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করছে বলে হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করেছে। ন্যাশনাল সিকিউরিটির মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, মার্কিন এই ক্লাস্টার বোমা রাশিয়ার প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান এবং অপারেশনে ‘কার্যকরভাবে’ ব্যবহার করা হচ্ছে।
টানা প্রায় দেড় বছর ধরে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। এই পরিস্থিতিতে রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। অল্প সময়ের মধ্যে মার্কিন সেই বোমা ইউক্রেনের হাতেও পৌঁছে যায়।
তবে ইউক্রেন এই বোমা ব্যবহার করবে কিনা বা কবে নাগাদ এটি ব্যবহার করবে তা নিয়ে সন্দেহ ছিল। কারণ কিয়েভ এই বোমা ব্যবহার করলে ইউক্রেনেও পাল্টা ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের হুমকি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। তিনি বলেছিলেন, রাশিয়ার কাছে ক্লাস্টার বোমার ‘পর্যাপ্ত মজুদ’ রয়েছে এবং প্রয়োজনে সেগুলো ব্যবহার করা হবে।
বিবিসি বলছে, কুখ্যাত এই বোমার ব্যবহার ১০০টিরও বেশি দেশে নিষিদ্ধ। এই ধরনের বোমা আঘাত হানার পর বিস্তৃত এলাকাজুড়ে মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করতে পারে এবং এটি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
কিন্তু ইউক্রেনে গোলাবারুদের সরবরাহ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র এই বোমা কিয়েভকে সরবরাহ করতে সম্মত হয়। যদিও ইউক্রেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এই বোমাগুলো শুধুমাত্র রাশিয়ান শত্রু সৈন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে। ইউক্রেনের দাবি, তারা এই বোমা রাশিয়ায় ব্যবহার করবে না।
ন্যাশনাল সিকিউরিটির মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, ‘তারা (ইউক্রেন) এসব বোমা যথাযথভাবে ব্যবহার করছে। তারা এগুলো কার্যকরভাবে ব্যবহার করছে এবং এসব বোমা আসলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামূলক কর্মকাণ্ড এবং রাশিয়ার প্রতিরক্ষামূলক কৌশলের ওপর প্রভাব ফেলছে। আমি মনে করি, আমি এতোটুকুই বলতে পারি।’
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের সাম্প্রতিক গ্রীষ্মকালীন পাল্টা আক্রমণের সময় তাদের গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাওয়া এবং পাল্টা হামলা প্রত্যাশার চেয়ে ধীরগতির ও ব্যয়বহুল হয়েছে বলে ইউক্রেন সতর্ক করার পরে যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিকে ক্লাস্টার বোমা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
যদিও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই সিদ্ধান্তকে ‘খুব কঠিন’ বলে অভিহিত করেছেন, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাজ্য, কানাডা, নিউজিল্যান্ড এবং স্পেন এই ধরনের বোমার ব্যবহারের বিরোধিতা করেছিল।
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছিল, ১০০ টিরও বেশি দেশে ক্লাস্টার বোমা নিষিদ্ধ। ক্লাস্টার বোমা রকেট সদৃশ একটি কাঠামোর ভেতর থাকে। এ বোমা বিমান, কামান ও রকেট লঞ্চার থেকে ছোঁড়া যায়। ক্লাস্টার বোমা যখন ছোঁড়া হয় তখন এর ভেতর থাকা ছোট ছোট বোমা ছড়িয়ে যায় এবং এগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
আর এটি আঘাত হানার পর বিস্তৃত এলাকাজুড়ে মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করতে পারে। এছাড়া বিস্ফোরণে ব্যর্থ হওয়া বোমাগুলোও কয়েক দশক ধরে বিপদ জারি রাখে। মূলত বেসামরিক মানুষ হতাহত হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ইউক্রেনকে এ বোমা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এছাড়া ক্লাস্টার বোমা সংক্রান্ত কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি রাশিয়া, ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্র। মূলত ওই কনভেনশনে এই ধরনের অস্ত্র উৎপাদন, মজুদ, ব্যবহার এবং স্থানান্তর নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তবে কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী স্পেন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও কানাডার মতো মার্কিন-মিত্র দেশগুলো ইউক্রেনকে এই ধরনের যুদ্ধাস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে আগেই বিরোধিতা করেছিল।
অবশ্য ক্লাস্টার বোমাবিরোধী চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র না থাকায় ইউক্রেনকে এই ধরনের বোমা দিতে উত্তর আমেরিকার এই দেশটির আইনি কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি।
টিএম