গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত করায় ৩৯ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার দায়ে মধ্য আমেরিকার চারটি দেশের আরও ৩৯ জনের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে নতুন করে ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ওই ব্যক্তিদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে।
মধ্য আমেরিকার ওই চার দেশ হলো, এল সালভাদর, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস ও নিকারাগুয়া। সেকশন-৩৫৩ করাপশন অ্যান্ড আনডেমোক্রেটিক অ্যাক্টরস রিপোর্ট-২০২৩ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩৫৩ ধারা অনুযায়ী কংগ্রেসের কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে চিহ্নিত বিদেশি এই ব্যক্তিরা মার্কিন ভিসাপ্রাপ্তিতে ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, ইতোমধ্যে তাদের নামে কোনও ভিসা থাকলে তা তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার ও অন্য কোনও বৈধ ভিসা বা প্রবেশের নথিপত্রও বাতিল করা হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিকারাগুয়ার ১৩ জন, গুয়াতেমালার ১০ জন, হন্ডুরাসের ১০ জন এবং এল সালভাদরের ছয়জনের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি, সিনেটের পররাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক কমিটি, বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট হাউস কমিটি এবং বিচার বিভাগের সিনেট কমিটির কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা জেনেশুনে নিজ নিজ দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বা প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন অথবা এমন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন। নিষেধাজ্ঞার আওতার আসা ওই ৩৯ ব্যক্তি সরকারি বিভিন্ন চুক্তিতে অনিয়ম, ঘুষগ্রহণ, চাঁদাবাজি এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লোপাট এবং মানি লন্ডারিংয়ে জড়িত। দুর্নীতির বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি তদন্তকারীদের প্রতি সহিংসতা, হয়রানি বা ভীতি প্রদর্শন করেছেন তারা।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও অন্যান্য উৎস থেকে পাওয়া বিশ্বাসযোগ্য তথ্য বা অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ব্যক্তিদের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এর আগে, গত ২৪ মে বাংলাদেশিদের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে এই নীতি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। এই নীতির আওতায় যদি কোনও বাংলাদেশি নাগরিক গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য দায়ী হন বা এরকম চেষ্টা করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়; তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা দেওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে।
ওইদিন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান এবং সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার-সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বিচারবিভাগ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সদস্যরাও এই ভিসা নীতির আওতায় পড়বেন।
যেসব কর্মকাণ্ড গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বানচালের আওতায় পড়বে সেগুলোও মার্কিন বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যে আছে, ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকার প্রয়োগ করা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করার জন্য সহিংসতাকে কাজে লাগানো এবং এমন কোনও পদক্ষেপ; যার উদ্দেশ্য রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা সংবাদমাধ্যমকে তাদের মত প্রচার থেকে বিরত রাখা।
বাংলাদেশে অবাধ-সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনকে সমর্থন দিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট-এর ২১২(এ)(৩)(সি)(৩সি) ধারা বলে এই নতুন নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র।
নতুন এই নীতির কথা ঘোষণা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছিলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সবার দায়িত্ব এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যারা কাজ করছেন তাদের সবার প্রতি সমর্থন জানাতেই তিনি এই নীতি ঘোষণা করেছেন।
সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, আলজাজিরা।
এসএস