পুতিনকে আটকের চেষ্টা হলে তা হবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে গ্রেপ্তার করার যে কোনো প্রচেষ্টাকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে উল্লেখ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ইউক্রেনে আগ্রাসন ও যুদ্ধপরাধের দায়ে রুশ প্রেসিডেন্টের ওপর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে এবং দেশের বাইরে গেলে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে এমন সতর্কবার্তা সামনে আনলো দক্ষিণ আফ্রিকা। বুধবার (১৯ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্লাদিমির পুতিন যখন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাবেন তখন তাকে গ্রেপ্তার করার যে কোনো প্রচেষ্টা রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবে বলে দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা জানিয়েছেন।
আফ্রিকার এই দেশটির জোহানেসবার্গে আন্তর্জাতিক বৈঠক হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে প্রেসিডেন্ট রামাফোসা এই সতর্কবাণী সামনে আনলেন। কারণ জোহানেসবার্গের সেই বৈঠকে অংশ নিতে রাশিয়ান প্রেসিডেন্টকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
চলতি বছরের মার্চে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পুতিন রাশিয়ায় থাকলে সমস্যা নেই, তবে পুতিন যদি রাশিয়ার ভূখণ্ড ছেড়ে বের হন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রযোজ্য হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকা আইসিসির স্বাক্ষরকারী দেশ এবং তাই এই দেশটির তাকে গ্রেপ্তারে সহায়তা করা উচিত। তবুও অতীতে এই দেশটি সেই বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে অস্বীকার করেছে।
এর আগে ২০১৫ সালে সুদানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে নিরাপদে চলে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বশিরের বিরুদ্ধে তার নিজ দেশের লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ছিল।
আগামী আগস্ট মাসে জোহানেসবার্গে ব্রিকস জোটের সদস্য দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রেসিডেন্ট পুতিনকেও সেখানে অংশ নিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর এই জোটকে কেউ কেউ উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি-৭ গ্রুপের বিকল্প হিসেবে দেখেন।
এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় আসলেও পুতিনকে গ্রেপ্তারে নারাজ দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার। তবে পুতিন দেশে পা রাখার সাথে সাথে তাকে গ্রেপ্তারে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করার চেষ্টা করার জন্য আদালতে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স।
আদালতের নথিগুলোতে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট রামাফোসা এই জাতীয় যেকোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিয়েছেন। কারণ হিসেবে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।
এক হলফনামায় তিনি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিনকে গ্রেপ্তার ও আত্মসমর্পণের আহ্বান কার্যকর করতে দক্ষিণ আফ্রিকার স্পষ্ট সমস্যা রয়েছে। রাশিয়া স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তার বর্তমান প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তার করা হবে যুদ্ধ ঘোষণা। রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে জড়ানোর ঝুঁকি আমাদের সংবিধানের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।’
প্রেসিডেন্ট রামাফোসা আরও বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা বেশ কয়েকটি আফ্রিকান দেশের মধ্যে একটি যারা ‘যুদ্ধের সম্পূর্ণ অবসানের লক্ষ্যে’ রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনা করছে এবং এই পরিস্থিতিতে পুতিনকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা বিপরীত ফল আনতে পারে।
উল্লেখ্য, ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ করার অভিযোগে চলতি বছরের মার্চ মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। পুতিনের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, তিনি বেআইনিভাবে ইউক্রেনের শিশুদের রাশিয়াতে সরিয়ে নিয়েছেন।
আদালত বলছে, এই অপরাধ গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর থেকেই ঘটে চলেছে। একই অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের শিশু অধিকার বিষয়ক কমিশনার মারিয়া এলভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও।
মূলত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের হাতে বিচারিক ক্ষমতা থাকলেও কোনও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা নেই। আইসিসি যা করতে পারে তা হলো, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিভিন্ন দেশের সহায়তায় গ্রেপ্তার করা এবং গ্রেপ্তারের পরে তাকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে বিচারের জন্য হাজির করা।
এছাড়া আইসিসি তার বিচারিক ক্ষমতাও শুধু সেসব দেশে প্রয়োগ করতে পারে, যে দেশগুলো এই আদালত গঠন করতে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। চুক্তিটি রোম সংবিধি নামে পরিচিত। রাশিয়া এই সংবিধিতে স্বাক্ষর করেনি। তাই পুতিন বা মারিয়া এলভোভা-বেলোভাকে আপাতত এই আদালতের হাতে সমর্পণের কোনও সুযোগ নেই।
তবে আইসিসিতে স্বাক্ষরকারী যেসব দেশ রয়েছে তার মধ্যে আছে দক্ষিণ আফ্রিকার নামও।
টিএম