কৃত্রিম মিষ্টি ক্যান্সারের ‘সম্ভাব্য কারণ’, সীমিত খেলে সমস্যা নেই
কোমল পানীয় ও অন্যান্য ভোজ্য পণ্যে ব্যবহৃত কৃত্রিম মিষ্টি অ্যাসপার্টামকে ‘সম্ভাব্য ক্যান্সারজনক’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একটি স্বাধীন সংস্থা। তবে বর্তমানে অ্যাসপার্টাম গ্রহণের সর্বোচ্চ যে পরিমাণ নির্ধারিত আছে, সে অনুযায়ী এটি খেলে কোনো সমস্যা নেই বলে জানিয়েছে ডব্লিউএইচওর অপর একটি সংস্থা।
অ্যাসপার্টাম নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আলাদা দু’টি সংস্থা গবেষণা করে। এরমধ্যে একটির কাজ ছিল— অ্যাসপার্টাম স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কিনা সেটি দেখা। অপরটির দায়িত্ব ছিল— বর্তমানে এ কৃত্রিম মিষ্টি গ্রহণের যে পরিমাণ নির্ধারিত আছে, সেটি মেনে চললে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয় কিনা।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম মিষ্টি হিসেবে অ্যাসপার্টাম সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। বিশ্বখ্যাত কোমল পানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কোকাকোলার ডায়েট সোডা থেকে শুরু করে মার্সের এক্সট্রা চুইংগামে এ পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) জাতিসংঘের ফ্রান্সের লিঁওভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) অ্যাসপার্টামকে ‘সম্ভাব্য ক্যান্সারজনক’ হিসেবে ঘোষণা দেয়।
এ ঘোষণার অর্থ হলো— অ্যাসপার্টাম গ্রহণের কারণে ক্যান্সার সৃষ্টি হয় এমন শক্তিশালী প্রমাণ তারা পায়নি। তবে সংস্থাটি খুঁজে দেখেনি— স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার জন্য একজন মানুষকে কতটা অ্যাসপার্টাম গ্রহণ করতে হবে।
এ বিষয়টি গবেষণা করে দেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার, জেনেভাভিত্তিক আলাদা সংস্থা ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গনাইজেশনের (এফএও) জয়েন্ট কমিশন অন ফুড এডেটিভ (জেইসিএফএ)।
শুক্রবারই অপর এক ঘোষণায় জেইসিএফএ জানায়, তারা অ্যাসপার্টামে ক্ষতিকর কোনো কিছু থাকার শক্তিশালী প্রমাণ পায়নি। সংস্থাটি তাদের সুপারিশে বলেছে, সাধারণ মানুষ প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪০মিলিগ্রাম অ্যাসপার্টাম গ্রহণ করতে পারেন।
জেইসিএফএ ১৯৮১ সালে প্রথম এ পরিমাণ ঠিক করে দিয়েছিল। এরপর বিশ্বের সকল খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাই তাদের নিজ দেশের নাগরিকদের এই একই নির্দেশিকা দিয়েছিল।
এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত নয়— এমন কয়েকজন বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, ক্যান্সারের সঙ্গে অ্যাসপার্টামের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ খুবই দুর্বল।
অপরদিকে কোমল পানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, জাতিসংঘের এ ঘোষণা প্রমাণ করছে— অ্যাসপার্টাম মানবদেহের জন্য নিরাপদ এবং যারা তাদের ডায়েটে চিনির বিকল্প রাখতে চান তাদের জন্য এ উপাদানটি ভালো বিকল্প।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, বর্তমানে অ্যাসপার্টামের যে পরিমাণ নির্ধারিত আছে সেটি স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়। যদি এ কৃত্রিম মিষ্টি খেয়ে কারও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হয়— তাহলে প্রতিদিন ৯ থেকে ১৪ ক্যান সোডা পান করতে হবে। যা সাধারণের তুলনায় ১০ গুণ বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পুষ্টি বিষয়ক প্রধান ফ্রান্সেসকো ব্রাঙ্কা বলেছেন, ‘আমাদের ফলাফল নির্দেশ করেনি মাঝে মাঝে অ্যাসপার্টাম খাওয়ার বিষয়টি ভোক্তাদের জন্য বড় কোনো ঝুঁকি তৈরি করে।’
তবে তিনি জানিয়েছেন, বেশিরভাগ মানুষ মতামত দিয়েছেন চিনি বা কৃত্রিম চিনির মধ্যে যদি তাদের কোনেটিকে বেঁছে নিতে বলা হয়; তাহলে তারা দুটির একটিকেও বেঁছে নেবেন না। এরবদলে পানি পানকে প্রাধান্য দেবেন তারা।
সূত্র: রয়টার্স
এমটিআই