সেই পাঁচ কমান্ডারকে ইউক্রেনে ফিরিয়ে আনলেন জেলেনস্কি
ইউক্রেনের সাবেক পাঁচ কমান্ডারকে দেশে ফিরিয়ে এনেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শনিবার (৮ জুলাই) তুরস্ক থেকে তাদের ইউক্রেনে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এই ঘটনায় রাশিয়া ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং বন্দি বিনিময় চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে।
দেশে ফিরিয়ে আনা ওই পাঁচ কমান্ডার মারিউপোলের সেই আজভস্টল স্টিল কারখানায় অবস্থান নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। রোববার (৯ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভলোদিমির জেলেনস্কি শনিবার তুরস্ক থেকে মারিউপোলে সেই ইউক্রেনীয় ঘাঁটির পাঁচজন সাবেক কমান্ডারকে দেশে নিয়ে এসেছেন। ইউক্রেনের জন্য এটি বেশ বড় অর্জন এবং এর প্রতীকী কৃতিত্বও অনেক বেশি।
তবে রাশিয়া বলেছে, এই ঘটনায় গত বছর হওয়া বন্দি বিনিময় চুক্তি লঙ্ঘন হয়েছে। মূলত বন্দি বিনিময় চুক্তির অধীনে ওই পাঁচ কমান্ডারকে তুরস্কের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। আর যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের তুরস্কেই থাকার কথা।
রয়টার্স বলছে, তুরস্ক থেকে এসব কমান্ডারকে মুক্তি দেওয়ার ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে নিন্দা করেছে রাশিয়া। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, বিনিময় চুক্তির অধীনে এসব ব্যক্তিকে তুরস্ক তার দেশে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং তাদের মুক্তির বিষয়টি মস্কোকে জানানো হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
এদিকে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ৫০০তম দিনে শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার সেনাদের ধন্যবাদ জানান। জেলেনস্কি এই ভাষণ দেন কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে ইউক্রেনের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ স্নেক আইল্যান্ডে।
রাশিয়ার আগ্রাসনের শুরুর দিকে কৃষ্ণসাগরীয় এই দ্বীপের প্রতিরক্ষায় থাকা সেনারা রুশ বাহিনীকে কঠোর জবাব দিয়েছিল, যাতে তারা অত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। রাশিয়া শেষ পর্যন্ত এই দ্বীপ দখল করে নিলেও পরে ইউক্রেন তা পুনরুদ্ধার করে।
রয়টার্স বলছে, গত বছর রাশিয়ার দখল করা সবচেয়ে বড় শহর ছিল মারিউপোল। রাশিয়া ওই শহরটি দখলে নিতে ব্যাপক আক্রমণ চালায় এবং সেখানকারই আজভস্টাল স্টিল প্ল্যান্ট থেকে মারিউপোলকে রক্ষায় তিন মাসব্যাপী প্রতিরক্ষার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পাঁচজন ইউক্রেনীয় কমান্ডার। শনিবার ওই পাঁচ কমান্ডারকে ইউক্রেনে নায়কের মতো বরণ করে নেওয়া হয়।
গত শুক্রবার ইস্তাম্বুলে আলোচনার জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে দেখা করা প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা তুরস্ক থেকে দেশে ফিরছি এবং আমাদের নায়কদের দেশে নিয়ে আসছি।’
মারিউপোলের ভয়াবহ সেই যুদ্ধে হাজার হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছিল এবং যুদ্ধের প্রথম মাসগুলোতে রাশিয়ান বাহিনী এই শহরটিকে কার্যত ধ্বংস করে দিয়েছিল। ইউক্রেনীয় প্রতিরোধ যোদ্ধারা আজভস্টাল প্ল্যান্টের নীচে টানেল এবং বাঙ্কারে আটকে ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত গত বছরের মে মাসে তাদের রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণের আদেশ দেয় কিয়েভ।
পরে তুরস্কের মধ্যস্থতায় মস্কো গত বছরের সেপ্টেম্বরে তাদের কয়েকজনকে বন্দি বিনিময় চুক্তির অধীনে মুক্ত করে দেয়। তবে সেখানে শর্ত ছিল যে, ইউক্রেনীয় এসব কমান্ডারদের যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তুরস্কে থাকতে হবে।
তবে সেই চুক্তি লঙ্ঘন করে ইউক্রেনীয় এসব কমান্ডারদের মুক্তি দেওয়ায় এবং তাদের তুরস্ক থেকে ইউক্রেনে ফেরার সুযোগ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় রাশিয়া। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রাশিয়ার বার্তা সংস্থা আরআেএ’কে বলেছেন: ‘এ বিষয়ে কেউ আমাদের অবহিত করেনি। চুক্তি অনুসারে, সংঘাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই কমান্ডারদের তুরস্কের ভূখণ্ডে থাকতে হবে।’
পেসকভ বলেছেন, তুরস্কের ন্যাটো মিত্রদের তীব্র চাপের ফলস্বরূপ আগামী সপ্তাহে সামরিক এই জোটের শীর্ষ সম্মেলনের আগে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে যেখানে ইউক্রেন তার ভবিষ্যৎ সদস্যপদ সম্পর্কে ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়ার আশা করছে।
অবশ্য চুক্তি লঙ্ঘন করে এসব কমান্ডারদের কেন এখনই দেশে ফিরে যেতে দেওয়া হলো তার কোনও ব্যাখ্যা দেননি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। এছাড়া তুরস্কের যোগাযোগ অধিদপ্তরে এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনও মন্তব্য করেনি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
টিএম