রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা ওয়াগনার গ্রুপের
এবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও সেনাবাহিনীর চীফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ বাহিনীর অন্যতম সহযোগী ও বেসরকারি সামরিক বাহিনী পিএমসি ওয়াগনার। শুক্রবার এক অডিও বার্তায় এই বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার ইয়েভগেনি প্রিগোজিন (৬২)।
অডিওবার্তায় নিজের মুখপাত্রের মাধ্যমে ইয়েভগেনি প্রিগোজিন ইউক্রেনে অভিযানরত রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণায় বলেন, ‘তারা (রুশ বাহিনী) আমাদের বিভিন্ন সেনা শিবিরের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় আমাদের অনেক সহযোদ্ধা সেনাসদস্যের মৃত্যুও হয়েছে।’
‘এ কারণে পিএমসি ওয়াগনারের সর্বোচ্চ নির্বাহী ফোরাম কমান্ডার্স কাউন্সিল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সামরিক নেতৃত্বের হাত থেকে রাশিয়াকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।’
‘আমরা মস্কো অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের বাহিনীর ২৫ হাজার সদস্য এই অভিযানে যোগ দিয়েছে। তারা শেষ পর্যন্ত এগিয়ে যাবে। (এই যাত্রাপথে) কেউ যদি আমাদের প্রতিরোধ করতে চায়, সেক্ষেত্রে আমরা সেই প্রতিরোধকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করব এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা ধ্বংস করব।’
অডিও বক্তব্যে বেশ কয়েকবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং দেশটির সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমোভের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন পিএমসি ওয়াগনারের শীর্ষ কমান্ডার। তাদেরকে ‘নোংরা বিশ্বাসঘাতক’ উল্লেখ করে প্রিগোঝিন বলেন, ‘আমরা তাদের নোংরামোর শেষ দেখতে চাই। আমরা কোনো সেনা অভ্যুত্থান করছি না, বরং ন্যায়বিচারের জন্য (মস্কো অভিমুখে) এগিয়ে চলছি।’
২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করেছে রুশ বাহিনী। এই অভিযান শুরুর কয়েক মাস পর রুশ বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় রুশভিত্তিক বেসরকারি সামরিক কোম্পানি পিএমসি ওয়াগনার। ইউক্রেন ছাড়াও সিরিয়া, লিবিয়া, মালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থের বিনিময়ে সরকারি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে যুদ্ধ করছেন ওয়াগনারের সেনাসদস্যরা।
রুশ কমান্ডের নেতৃত্বে রাশিয়ার সরকারি সেনাসদস্যদের সঙ্গে এতদিন বেশ ভালোভাবেই মিলেমিশে ইউক্রেনে যুদ্ধ করছিল পিএমসি ওয়াগনার। তবে গত কয়েক মাস ধরেই ভাসা ভাসা ভাবে ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে রুশ বাহিনীর সঙ্গে ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের খবরও আসছিল।
শুক্রবারের ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের অডিও বার্তার মাধ্যমে প্রথম এ ব্যাপারটি সবার সামনে এলো। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনী অবশ্য তাৎক্ষণিক এক বিবৃতিতে বলেছে, পিএমসি ওয়াগনারের শীর্ষ কমান্ডারের বক্তব্য বাস্তবের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির কোনো সামঞ্জস্য নেই।
অডিও বার্তা প্রকাশের পর থেকে পিএমসি ওয়াগনারের সার্বক্ষণিক গতবিধির হালনাগাদ তথ্য প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জানানো হচ্ছে বলে পৃথক এক বার্তায় জানিয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিন।
রক্তের বন্যা বইছে
শুক্রবারের অডিওবার্তায় ইয়েভগেনি প্রিগোজিন রুশ বাহিনীর ও মস্কোয় ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে পিএমসি ওয়াগনার যেসব সাফল্য দেখিয়েছে— তার সবই ছিনতাই করে নিয়েছে মস্কো। এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনী ও ওয়াগনার বাহিনীর ‘কাঁধে কাঁধ’ মিলিয়ে যুদ্ধের কথা থাকলেও বাস্তবে তা একেবারেই হচ্ছে না, বরং বিপজ্জনক মিশনগুলোতে ইচ্ছাকৃত ভাবে ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পিএমসি ওয়াগনারের শীর্ষ কমান্ডার।
‘কেন ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু হলো? কারণ— একদল বেজন্মা এই যুদ্ধের মাধ্যমে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিতে চায়। আমরা তাদের এই স্বার্থপর, কুচক্রী মনোভাবের শিকার,’ অডিওবার্তায় মস্কোর প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে এসব বলেন ইয়েভগেনি প্রিগোজিন।
এসএসডব্লিউ