পশ্চিম তীরে হাজারো নতুন অবৈধ বসতির অনুমোদন ইসরায়েলের
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে আবারও নতুন করে হাজার হাজার অবৈধ বসতি নির্মাণ করতে চলেছে ইসরায়েল। এ লক্ষ্যে নতুন আবাসন ইউনিট নির্মাণ পরিকল্পনার অনুমোদনও দিয়েছে ভূখণ্ডটির ক্ষমতাসীন কট্টরপন্থি জোট সরকার।
এতে করে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি আবাসন ইউনিট নির্মাণ করতে পারবে ইসরায়েল। সোমবার (১৯ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের কট্টরপন্থি জোট সরকার ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিমতীরে হাজার হাজার নতুন আবাসন ইউনিটের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে এবং গত ২৭ বছর ধরে মেনে চলা নানা পদক্ষেপকে পাশ কাটিয়ে অবৈধ বসতি নির্মাণ ত্বরান্বিত করার জন্য অতি-ডানপন্থি অর্থমন্ত্রীকে ক্ষমতাও দিয়েছে।
পশ্চিম জেরুজালেম থেকে আল জাজিরার ইমরান খান বলেছেন, রোববার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার মন্ত্রিসভায় অবৈধ বসতি নির্মাণের এই পদক্ষেপটিকে অনুমোদন করেছেন। একইসঙ্গে অবৈধ বসতি নির্মাণের সমর্থক অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচকে বসতি নির্মাণের জন্য ছয়-স্তরের প্রক্রিয়া বাইপাস করার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। আর এটি আন্তর্জাতিক আইনের অবৈধ বলে বিবেচিত।
বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং বেজালেল স্মোট্রিচের মধ্যে এই চুক্তিটি বেশ কিছু সময় ধরে আলোচনার টেবিলে ছিল জানিয়ে ইমরান খান বলেন, এই অনুমোদন উগ্রপন্থি অর্থমন্ত্রীকে ‘সম্পূর্ণ অবৈধ বসতি-নির্মাণের প্রক্রিয়া কার্যকরভাবে গ্রহণ করার’ অনুমতি দেবে।
বেজালেল স্মোট্রিচ বলেছেন: ‘আমরা বসতি স্থাপন প্রকল্পের উন্নয়ন অব্যাহত রাখব এবং ভূখণ্ডজুড়ে ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ জোরদার করব।’
আল জাজিরা বলছে, অধিকৃত পশ্চিমতীরের বিভিন্ন এলাকায় ৪ হাজার ৫৬০টি আবাসন ইউনিটের অনুমোদনের এই পরিকল্পনা ইসরায়েলের সুপ্রিম প্ল্যানিং কাউন্সিলের এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আগামী সপ্তাহে এই কাউন্সিল বৈঠকে বসবে।
এদিকে ইসরায়েলের সর্বশেষ এই পদেক্ষেপে বিভিন্ন গোষ্ঠী গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এতে করে পুরো পশ্চিম তীর শিগগিরই ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে। ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বসতি স্থাপন কার্যক্রম অনুমোদন করা ‘পশ্চিম তীরের দখল কার্যক্রমকে পরিপূর্ণ করার কাজ বিপজ্জনকভাবে বাড়িয়ে দেবে’।
এদিকে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজার শাসন ক্ষমতায় থাকা হামাস বলেছে, এই পদক্ষেপটি শুধুমাত্র এই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে। অন্যদিকে ফাতাহ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ‘গাজা উপত্যকা থেকে বসতি স্থাপনকারীদের যেভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঠিক সেভাবেই পশ্চিম তীর থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে’।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের সাথে যৌথ অর্থনৈতিক কমিটির বৈঠক বয়কট করবে। সোমবার এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আল জাজিরা বলছে, ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকে নিজেদের অগ্রাধিকারের শীর্ষে রেখেছে ইসরায়েলের কট্টরপন্থি সরকার। নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন এই জোট সরকারের মধ্যে অতি-অর্থোডক্স দল এবং একটি অতি-ডানপন্থি অতি-জাতীয়তাবাদী ধর্মীয় উপদলও রয়েছে।
এছাড়া নেতানিয়াহুর দল লিকুদ পার্টি ‘ইসরায়েলের ভূখণ্ডের সমস্ত অংশে অবৈধ বসতি স্থাপনের অগ্রগতি ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর এর মধ্যে অধিকৃত পশ্চিম তীরের গ্যালিলি, নেগেভ, গোলান হাইটস এবং জুডিয়া ও সামারিয়ার নামও রয়েছে।’
মূলত গ্যালিলি, নেগেভ, গোলান হাইটস এবং জুডিয়া ও সামারিয়া অধিকৃত ফিলিস্তিনি পশ্চিম তীরের এলাকা এবং বাইবেলের নামানুসারে ইসরায়েল এসব ফিলিস্তিনি অঞ্চলকে এই নামেই ডেকে থাকে।
এদিকে ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার রোববার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এমন যেকোনো একতরফা পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে যা সংকটের দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান আরও কঠিন করে তোলে এবং শান্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইসরায়েল সরকারকে জর্ডানের আকাবা এবং মিশরের শারম আল শেখ-এ দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করার এবং উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে সংলাপে ফিরে আসার আহ্বান জানাই।’
টিএম