সামরিক আদালতে ইমরানের বিচার হওয়া উচিত, বলছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
পাকিস্তানের সাবেক প্রথানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খানের বিচার সামরিক আদালতে হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ।
ইমরানের গ্রেপ্তারে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে বিশ্বকাপ জয়ী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটারের ‘ভূমিকার কারণেই’ এটি হওয়া উচিত বলে জানিয়েছেন তিনি। বুধবার (৩১ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে চলতি মাসের শুরুতে গ্রেপ্তারের পর দেশজুড়ে যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল তাতে তার ভূমিকার জন্য সামরিক আদালতে বিচার করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ। গত ৯ মে দেশজুড়ে মারাত্মক বিক্ষোভের অংশ হিসাবে সামরিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করার জন্য ইমরানকে ব্যক্তিগতভাবে অভিযুক্তও করেছেন তিনি।
আল জাজিরা বলছে, মঙ্গলবার স্থানীয় নিউজ চ্যানেল ডন নিউজে ইমরান খানকে সামরিক আদালতে বিচার করা হবে কিনা প্রশ্ন করা হলে সানাউল্লাহ উত্তরে বলেন, ‘অবশ্যই, কেন করা হবে না? তিনি সামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন এবং তারপরে তা কার্যকর করেছিলেন। আমি যতটা বুঝি, এটি পুরোপুরি সামরিক আদালতের মামলা।’
রানা সানাউল্লাহ দাবি করেন, গত ৯ মে যা ঘটেছে, তার সব কিছু করিয়েছেন ইমরান। যা ঘটেছে তিনি এই সবের স্থপতি।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায়, ‘(প্রমাণ) নথিভুক্ত আছে। এটা বিভিন্ন টুইট এবং তার বার্তায় আছে। কারা কী করবে এবং কোথায় করবে, তিনি (জেলে) যাওয়ার আগেই এই সমস্ত (পরিকল্পনা) ঠিক করা হয়েছিল। এছাড়া তাকে গ্রেপ্তার করা হলে কৌশল ও কর্তব্য কী হবে; এই সব সিদ্ধান্ত আগেই ঠিক করা হয়েছিল।’
দুর্নীতির মামলায় গত ৯ মে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয় ইমরান খানকে। তার সেই গ্রেপ্তার পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দেশে মারাত্মক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের ফলে পাকিস্তানে যে অস্থিরতা শুরু হয় তা টানা চারদিন অব্যাহত ছিল এবং এতে কমপক্ষে ১০ বিক্ষোভকারীর মৃত্যু ও বহু সামরিক ও রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যায়।
এছাড়া পাকিস্তানের ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে রাওয়ালপিন্ডিতে দেশটির সেনা সদর দপ্তরে (জিএইচকিউ) প্রবেশ করে এবং লাহোরে কর্পস কমান্ডারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এসব ঘটনায় সরকার ও সেনাবাহিনী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এর আগে অবশ্য গত সোমবার পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, সামরিক আইনের অধীনে ইমরান খানের বিচারের বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এমন কোনও সম্ভাবনাকে তিনি ‘বাতিল’ করতে পারেন না।
বিক্ষোভে জড়িত থাকার সন্দেহে বিচারের জন্য গত সপ্তাহে ১৬ জন বেসামরিক নাগরিককে সামরিক বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছে লাহোরের একটি আদালত।
আল জাজিরা বলছে, সামরিক আদালত প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রের শত্রুদের বিচারের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, ইমরানকে গ্রেপ্তারের জেরে রাস্তায় বিক্ষোভ-সহিংসতার পর থেকে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির হাজার হাজার সমর্থককে আটক করেছে।
টিএম