আমরা পাল্টা আক্রমণ শুরু করতে প্রস্তুত: ইউক্রেন
দখলকৃত অঞ্চলগুলো থেকে রাশিয়ার সেনাদের হটিয়ে দিতে পাল্টা আক্রমণ শুরুর জন্য ইউক্রেন প্রস্তুত আছে— ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির সঙ্গে শনিবার (২৭ মে) এক সাক্ষাৎকারে এমন কথা জানিয়েছেন দেশটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ওলেক্সি দানিলোভ।
কখন কোন সময় এ পাল্টা আক্রমণ শুরু হবে সেটির কোনো নির্দিষ্ট তারিখ জানাননি দানিলোভ। তবে তিনি বলেছেন, পুতিনের দখলদার সেনাদের কাছ থেকে নিজেদের ভূখণ্ড ফিরিয়ে নিতে ‘কাল, পরশু বা এক সপ্তাহের মধ্যে’ তাদের অভিযান শুরু হতে পারে।
এ কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, রুশ সেনাদের হটিয়ে দিতে তাদের সামনে এখন বিরাট সুযোগ আছে। কিন্তু এ সুযোগ কোনোভাবেই নষ্ট করতে চান না তারা।
ওলেক্সি দানিলোভ ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রিসভার প্রাণভোমরাও তিনি।
বিবিসির সঙ্গে দেওয়া এ সাক্ষাৎকারে দানিলভ জানিয়েছেন, বিধ্বস্ত বাখমুত শহর থেকে ওয়াগনার সেনারা সরে যাচ্ছেন। কিন্তু তারা যুদ্ধের ময়দান ছাড়ছে না। এর বদলে তিনটি ভিন্ন জায়গায় পুনর্গঠিত হচ্ছে তারা।
অপরদিকে বেলারুশে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের ব্যাপারে দানিলভ বলেছেন, এ নিয়ে তিনি একেবারেই নির্ভার এবং পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের বিষয়টি ‘তাদের জন্য কোনো ধরনের খবরই নয়।’
গত কয়েকদিন ধরেই পাল্টা আক্রমণ শুরুর কথা বলছে ইউক্রেন। তবে বহুল প্রতিক্ষীত এ অভিযান শুরুর আগে নিজেদের সেনাদের যতটা সম্ভব প্রশিক্ষণ দেওয়া ও পশ্চিমা অস্ত্র পাওয়ার চেষ্টা করছে দেশটি।
তবে ইউক্রেন যখন এ প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন রাশিয়াও বসে নেই। তারা দখলকৃত স্থানগুলো সুসংহত করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পাল্টা আক্রমণের বিষয়টি এখন কিছুটা থমকে আছে কারণ ইউক্রেনের নেতৃবৃন্দকে— নিজ দেশের জনগণ ও পশ্চিমা মিত্রদের দেখাতে হবে তারা রাশিয়ার দুর্গ ভেদ করে নিজেদের অঞ্চলগুলো পুনর্দখল করতে পারবে।
দানিলভ বলেছেন, তাদের অভিযান তখনই শুরু হবে যখন কমান্ডাররা বলবেন, ‘যুদ্ধের এ মুহূর্ত থেকে আমরা সর্বোচ্চ ফলাফলটা পাব।’
বিবিসির পক্ষ থেকে যখন তাকে প্রশ্ন করা হয় ইউক্রেন পাল্টা আক্রমণ চালানোর জন্য প্রস্তুত আছে কিনা? এর জবাবে ইউক্রেনের এ প্রভাবশালী কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা সবসময় প্রস্তুত। যেরকমটা যে কোনো সময় দেশকে বাঁচানোর জন্য প্রস্তুত ছিলাম।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমাদের বুঝতে হবে— সৃষ্টিকর্তা আমাদের যে ঐতিহাসিক সুযোগ দিয়েছে— এ সুযোগ আমরা হারাতে পারব না, যেন আমরা একটি স্বাধীন এবং ইউরোপের বড় দেশ হতে পারি।’
‘পাল্টা আক্রমণ আজ হতে পারে, পরশু হতে পারে বা এক সপ্তাহের মধ্যে হতে পারে। যদি এর জন্য নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করতে হয় তাহলে বিষয়টি অদ্ভুত হবে…. এভাবে হবে না। দেশের জন্য আমাদের অনেক বড় দায়িত্ব আছে এবং আমরা জানি এক্ষেত্রে ভুল করার কোনো অধিকার আমাদের নেই।’ যোগ করেন দানিলভ।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে রাশিয়ার অস্ত্র ভাণ্ডার, জ্বালানি ট্যাংকসহ বিভিন্ন অবকাঠামোয় হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনীয় সেনারা। অনেকে বলছেন, এরমাধ্যমে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। তবে দানিলভ জানিয়েছে, রুশ সেনাদের অবস্থান এবং অবকাঠামোতে হামলা চালানোর বিষয়টি যুদ্ধের শুরু থেকেই করে আসছেন তারা।
অপরদিকে বিধ্বস্ত বাখমুত শহরে ওয়াগনার সেনাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ১০ মাস যুদ্ধ করার বিষয়টি ঠিক আছে বলে দাবি করেছেন তিনি। তার মতে, বাখমুত হলো ইউক্রেনের অংশ ফলে এটির দখল রাখা তাদের দায়িত্ব ছিল। তিনি আরও দাবি করেছেন, বাখমুতের লড়াই পুরো যুদ্ধে বড় প্রভাব রেখেছে।
সূত্র: বিবিসি
এমটিআই