পাকিস্তানিদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করার অধিকার আছে: যুক্তরাষ্ট্র
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত পাকিস্তানে উত্তাপ কেবলই বাড়ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেপ্তারকে ঘিরে সম্প্রতি সেই উত্তাপ চরমে পৌঁছায়। তবে টানা বিক্ষোভ ও সহিংসতার একপর্যায়ে নাটকীয়তার মাধ্যমে মুক্ত হন ইমরান।
আর এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলেছে, পাকিস্তানি নাগরিকদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভসহ মত প্রকাশের অধিকার আছে। তবে সহিংসতায় যুক্ত হওয়া উচিত নয়। মঙ্গলবার (১৬ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের জনগণের নিজেদের মত প্রকাশের অধিকার আছে, তবে সহিংসতায় অংশ না নিয়ে তাদের তা করা উচিত বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় সোমবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল একথা জানান।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই প্রিন্সিপাল ডেপুটি স্পোকসপারসন গত সপ্তাহে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেপ্তারের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। তবে তিনি বলেছেন, যে কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় দেশের আইনকে সম্মান করা উচিত।
সোমবারের ব্রিফিংয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই মুখপাত্রকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেপ্তারের পর পাকিস্তানজুড়ে যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল সে সম্পর্কে বিশেষভাবে জিজ্ঞাসা করা হয়।
জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘আমরা মনে করি, নাগরিকদের নিজেদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত, তবে কোনও সহিংসতায় অংশগ্রহণ না করে তা করা উচিত। কারণ সহিংসতা সরকারি কর্মচারী এবং সরকারি অবকাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’
মার্কিন এই মুখপাত্রের কাছে ইমরান খানের গ্রেপ্তারের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কোনও রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র অন্য রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকে সমর্থন করে না বা প্রার্থী এবং অন্য দলের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও অবস্থানও নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো- একটি শক্তিশালী, স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ পাকিস্তান ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদ সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবং যে কোনও গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে তাদের আইন অনুসারে মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা উচিত।’
পাকিস্তানের সাংবাদিকদের খবরের অন্য আরেকটি দিক সামনে আনতে দেওয়া হয়নি বলে ইমরান খানের বিবৃতির বিষয়ে মন্তব্য করতে বলা হলে একইভাবে সতর্ক থেকে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘আমি বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে যাচ্ছি না। এছাড়া আমার কাছে এখান থেকে বলার মতো কোনও মূল্যায়নও নেই।’
এর আগে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশটিতে বিক্ষোভ ব্যাপক আকার ধারণ করার পর দেশটির সব দলকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছিল জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের ডেপুটি মুখপাত্র ফারহান হক সেসময় এক বিবৃতিতে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর ইসলামাবাদে যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে তা মহাসচিবের নজরে এসেছে। তিনি পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপে যথাযথ প্রক্রিয়া ও আইনের শাসনকে সম্মান করার আহ্বান জানান এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে সম্মান করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
উল্লেখ্য, দুর্নীতির মামলায় গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয় ইমরান খানকে। তার সেই গ্রেপ্তার পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দেশে মারাত্মক অস্থিরতা সৃষ্টি করে এবং এরই একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট ইমরানের গ্রেপ্তারকে অবৈধ এবং বেআইনি বলে রায় দেয়।
মূলত গত সপ্তাহে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে থেকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর (এনএবি) ওয়ারেন্টে পাকিস্তানের আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স তাকে গ্রেপ্তার করে।
পাকিস্তানের দুর্নীতি বিরোধী সংস্থার এই পদক্ষেপে দেশজুড়ে সেদিনই সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শেহবাজ শরিফের সরকার খাইবার পাখতুনখাওয়া, পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান এবং ইসলামাবাদসহ দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সেনাবাহিনীকে ডাকতে বাধ্য হয়।
সংবাদমাধ্যম বলছে, আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের ফলে পাকিস্তানে যে অস্থিরতা শুরু হয় তা শুক্রবার পর্যন্ত অব্যাহত ছিল এবং বিক্ষোভকারীদের বেশ কয়েকজনের মৃত্যু এবং কয়েক ডজন সামরিক ও রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যায়।
এছাড়া পাকিস্তানের ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে রাওয়ালপিন্ডিতে দেশটির সেনা সদর দপ্তরে (জিএইচকিউ) প্রবেশ করে এবং লাহোরে কর্পস কমান্ডারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।
টিএম