ব্যাংকে পড়ে আছে হাজার কোটি রুপি, বিপাকে রাশিয়া
রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংকে পড়ে থাকা অন্তত এক হাজার কোটি ভারতীয় রুপি নিয়ে বিপাকে পড়েছে রাশিয়া। এই বিপদকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতা।
এই পরিস্থিতিতে ভারতের মুদ্রা কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সে সম্পর্কে পরামর্শ করতে দিল্লির দ্বারস্থ হয়েছে মস্কো। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন এ তথ্য।
ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গোয়ায় শুরু হয়েছে ইউরোএশিয়া অঞ্চলের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা জোট শাংহাই কো অপারেশন অর্গানাইজেশনের বৈঠক। সংস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা চলছে উল্লেখ করে ল্যাভরভ বলেন, ‘এটা আসলেই আমাদের জন্য একটি বড় সমস্যা। আমরা এই অর্থ ব্যবহার করতে চাই, কিন্তু সেজন্য সবার আগে প্রয়োজন রুপিকে অন্য কোনো মুদ্রায় রুপান্তর করা। কারণ, ভারত ব্যতীত আর কোনো দেশে এই মুদ্রা চলে না।’
‘কীভাবে এই সমস্যাটির সমাধান করা যায়, তা নিয়েই (জয়শঙ্করের সঙ্গে) আলোচনা চলছে।’
ইউক্রেনে রুশ বাহিনী সামরিক অভিযান শুরুর পর রাশিয়ার জ্বালানি পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি একগুচ্ছ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্ররা। নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজার থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী ডলার সংগ্রহ করতে পারছে না দেশটি।
গত বছর মার্চে মস্কো ঘোষণা দেয়, এখন থেকে ডলারের পরিবর্তে রুবল ও অন্যান্য দেশের স্থানীয় মুদ্রায় জ্বালানি তেল ও গ্যাস রপ্তানি করবে রাশিয়া।
নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল রুশ তেলের দাম কত হবে, তা ও বেঁধে দিয়েছে ইউরোপ। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম থাকায় গত বছর সমানে রুশ জ্বালানি তেল আমদানি করতে থাকে ভারত। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দেশটি রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় খরিদ্দার।
রাশিয়ার রাষ্ট্রপতির দপ্তর ক্রেমলিনের সুপারিশ নিয়ে এতদিন নিজেদের মুদ্রা রুপিতে রুশ তেল কিনেছে ভারত। পাশাপাশি, ভারত যদি ডলারে রুশ তেল কিনত— সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় স্তরের নিষেধাজ্ঞায় পড়ার আশঙ্কা ছিল ভারতের।
কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রুবলের মানের টালমাটাল অবস্থায় রুপির বিনিময়ে তেল বিক্রির প্রকল্প বোঝা হয়ে উঠছে রাশিয়ার জন্য। সেই সঙ্গে এই সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলেছে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতা।
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংক অব রাশিয়ার’ তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ভলিউম ২৮০ কোটি ডলার; কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাশিয়ায় ভারতীয় পণ্যের রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ, অন্যদিকে ভারতের তেল আমদানি বেড়েছে ৫ গুণ।
এই তেল ক্রয় বাবদ ১ হাজার কোটি রুপিরও বেশি খরচ করেছে ভারত। রাশিয়ার ব্যাংকগুলোতে সেই রুপি সংরক্ষিতও আছে। কিন্তু ভারত ব্যতীয় অন্য কোনো দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রুপি গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় এই অর্থ দিয়ে কী করা যায়— তা নিয়ে সমস্যায় পড়েছে মস্কো।
গত ২৮ এপ্রিল ব্যাংক অব রাশিয়ার গভর্নর এলভিরা নাবিউলিয়ানা প্রথম এই সমস্যাটি মস্কোর সামনে উপস্থিত করেন।
সূত্র : এনডিটিভি
এসএমডব্লিউ