অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে যৌনতার ভিডিও ফাঁস
পার্লামেন্টের ভেতরে অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণশীল সরকারের কর্মীদের রগরগে যৌনতার ভিডিও ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর দেশটিতে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। সংসদের এক নারী এমপির ডেস্কের ওপর পার্লামেন্টের এক কর্মীর হস্তমৈথুন ও অন্যান্য যৌনতার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁসের পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন নেতৃত্বাধীন প্রশাসন আরেকটি বড় ধরনের কেলেঙ্কারির মুখোমুখি হয়েছে।
সহকর্মীর কাছে সরকারের এক নারী উপদেষ্টা ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন বলে গত মাসে অভিযোগ ওঠার পর থেকেই প্রচণ্ড চাপের মুখে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। ধর্ষণের এই অভিযোগ নিয়ে উত্তাল অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে এবার নতুন সঙ্কট তৈরি করল পার্লামেন্টের ভেতরে ফাঁস হওয়া যৌনতার নতুন এই কেলেঙ্কারি।
দেশটির একজন হুইসেলব্লোয়ার যৌনতার ভিডিও এবং ছবি ফাঁস করে দেওয়ার আগে জোট সরকারের কর্মীদের একটি প্রাইভেট গ্রুপে সেগুলো শেয়ার হয়। পরে সেখান থেকে এই ভিডিও ও ছবি অন্যান্য মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। দেশটির দৈনিক দ্য অস্ট্রেলিয়ান এবং চ্যানেল ১০ সোমবার পার্লামেন্ট ভবনের ভেতরে যৌনতার ভিডিও ও ছবি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে।
মঙ্গলবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন পার্লামেন্টের ভেতরে যৌনতার ঘটনাকে ‘একেবারে লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন।
এসব ছবি এবং ভিডিও ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর দেশটির পার্লামেন্টের নারী সদস্য এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়। পার্লামেন্টে নারী সহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে দেশজুড়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মাঝে যৌন কেলেঙ্কারির নতুন এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন।
পার্লামেন্টে যৌনতার ছবি ও ভিডিও ফাঁসকারীকে টম নামে শনাক্ত করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি দ্য অস্ট্রেলিয়ানকে বলেছেন, সরকারের এমপি এবং কর্মীরা প্রায়ই পার্লামেন্ট ভবনকে যৌনতার আঁতুড় ঘর হিসেবে ব্যবহার করেন। জোট সরকারের এমপিদের সন্তুষ্ট করার জন্য প্রতিনিয়ত পার্লামেন্ট ভবনে যৌন কর্মীদের আনা হয়।
তিনি বলেন, সংসদের একদল কর্মী প্রতিনিয়ত নিজেদের মধ্যে যৌনতার ছবিগুলো আদান-প্রদান করতেন। তিনি অনেকগুলো ছবি পেয়েছিলেন।
ছবি ও ভিডিও ফাঁসকারী ওই ব্যক্তি বলেন, পুরুষদের এক ধরনের চিন্তা-ভাবনার সংস্কৃতি আছে— তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। যদিও সেই সময় তিনি ভাবেননি যে পার্লামেন্টের ওই কর্মীরা আইন লঙ্ঘন করেছেন। তবে তারা দেউলিয়া বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারের এক কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এছাড়া সরকার এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
দেশটির নারীবিষয়ক মন্ত্রী ম্যারিসে প্যানি বলেছেন, এটি অত্যন্ত হতাশাজনক ঘটনা। সংসদের কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতি সম্পর্কে সরকার-নির্দেশিত তদন্তের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে এটি।
এর আগে, গত মাসে অস্ট্রেলিয়ার সরকারের উপদেষ্টা ব্রিটানি হিগিনস ২০১৯ সালে পার্লামেন্টের এক মন্ত্রীর অফিসে সহকর্মীর ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন। তার এই অভিযোগের পর দেশটিতে ব্যাপক বিতর্কের ঝড় শুরু হয়।
চলতি মাসের শুরুর দিকে দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলের বিরুদ্ধে ১৯৮৮ সালে ছাত্রজীবনে ১৬ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
বিতর্কিত এসব ঘটনায় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের ওপর চাপ বাড়ছে। এসব অভিযোগ মোকাবিলায় সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সমালোচকরা। মঙ্গলবার ক্যানবেরায় এক সংবাদ সম্মেলনে আবেগপ্রবণ হতে দেখা যায় স্কট মরিসনকে। এ সময় তিনি তার স্ত্রী, মা এবং কন্যাদের গুরুত্বের ব্যাপারে কথা বলেন। তিনি বলেন, নারীরা খুব বেদনাদায়ক সময় সহ্য করেন।
সূত্র: এএফপি, রয়টার্স।
এসএস