রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক হামলা রাশিয়ার
রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনজুড়ে বড় ধরনের হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। রুশ এই হামলার জেরে আহত হওয়ার পাশাপাশি ধ্বংসযজ্ঞের খবর পাওয়া গেছে। মূলত নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে বিজয় দিবস পালনের আগে ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়ার এই হামলার খবর সামনে এলো।
কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সোমবার (৮ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে বিজয় দিবস হিসেবে প্রতিবছর ৯ মে ‘ভিক্টরি ডে’ রাশিয়ায় ব্যাপকভাবে পালিত হয়। নাৎসি জার্মানির পরাজয়ের বার্ষিকীকে চিহ্নিতকারী এই দিবসটি রাশিয়ার জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং এই দিবসের প্রাক্কালেই রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে হামলার এই ঘটনা ঘটল।
রয়টার্স বলছে, রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ার হামলার কারণে কমপক্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলেছেন। এছাড়া রাশিয়ান নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী ওডেসা শহরে একটি খাদ্যদ্রব্যের গুদামে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে এবং ইউক্রেনের অন্যান্য কয়েকটি অঞ্চলেও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।
মস্কো মঙ্গলবার তার বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারণ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য নাৎসি জার্মানির পরাজয়ের এই বার্ষিকী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এ কারণে মঙ্গলবারের মধ্যে বাখমুতের দখল নিতে রুশ বাহিনী শহরটির দিকে গোলাবর্ষণ আরও তীব্রতর করেছে বলে অবরুদ্ধ শহরটির প্রতিরক্ষার দায়িত্বে থাকা ইউক্রেনের শীর্ষ জেনারেল বলেছেন।
এদিকে কিয়েভের সোলোমিয়ানস্কি জেলায় বিস্ফোরণে তিনজন আহত হয়েছেন এবং সোভিয়াটোশিন জেলায় ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ পড়ে অন্য আরও দু’জন আহত হয়েছেন বলে মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেছেন। এই দু’টি শহরই রাজধানী কিয়েভের কেন্দ্র থেকে পশ্চিমে অবস্থিত।
কিয়েভের সামরিক প্রশাসন বলেছে, ইউক্রেনের রাজধানীতে অবস্থিত জুলিয়ানি বিমানবন্দরের রানওয়েতে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ পড়েছে। এতে সেখানে কোনও আগুন লাগেনি, তবে জরুরি পরিষেবাগুলো সেখানে কাজ করছে। কিয়েভে দু’টি যাত্রীবাহী বিমানবন্দর রয়েছে এবং জুলিয়ানি বিমানবন্দর তার একটি।
সামরিক প্রশাসন আরও বলেছে, কিয়েভের কেন্দ্রীয় শেভচেনকিভস্কি জেলায় ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ একটি দ্বিতল ভবনে আঘাত করেছে বলে মনে হচ্ছে এবং এর ফলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে এই ঘটনায় সম্ভাব্য হতাহতের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, তারা কিয়েভে অসংখ্য বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আক্রমণ প্রতিহত করছে। অবশ্য কিয়েভের দিকে কতগুলো ড্রোন উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।
ওডেসার সামরিক প্রশাসনের মুখপাত্র সেরহি ব্রাচুক তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে একটি বিশাল অবকাঠামোর ছবি পোস্ট করেছেন। ওই অবকাঠামোটি সম্পূর্ণরূপে আগুনে নিমজ্জিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, এই খাদ্য গুদামের পাশাপাশি অন্যান্য স্থাপনাতেও রাশিয়া আক্রমণ চালিয়েছে।
মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশজুড়ে কয়েক ঘণ্টা ধরে বিমান হামলার সতর্কতা জারি ছিল। এছাড়া খেরসনের দক্ষিণাঞ্চলে এবং দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত জাপোরিঝিয়া অঞ্চলেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
জাপোরিঝিয়াতে রাশিয়ান-নিযুক্ত স্থানীয় কর্মকর্তা ভ্লাদিমির রোগভ বলেছেন, রাশিয়ান বাহিনী এই অঞ্চলের ছোট শহর ওরিখিভে একটি গুদাম এবং ইউক্রেনীয় সেনাদের অবস্থানে আঘাত করেছে। রয়টার্স স্বাধীনভাবে এই তথ্য যাচাই করতে সক্ষম হয়নি।
পৃথকভাবে রাশিয়ান বাহিনী রোববার উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলে আটটি স্থানে গোলাবর্ষণ করেছে বলে আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসন এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছে।
গত দুই সপ্তাহে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে বিশেষ করে ক্রিমিয়াতেও হামলা জোরদার হয়েছে। ইউক্রেন এসব হামলার পেছনে কোনও ভূমিকা রেখেছে কিনা তা নিশ্চিত না করেই বলেছে, শত্রুর অবকাঠামো ধ্বংস করে দীর্ঘ-প্রত্যাশিত স্থল হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
ইউক্রেনে রাশিয়ার এই আগ্রাসন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় সংঘাতের জন্ম দিয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। এছাড়া আরও লাখ লাখ লোককে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে এই সংঘাত।
টিএম