তেলের উত্তোলন কমাল ওপেক প্লাসের ৮ দেশ
জ্বালানি তেল উত্তোলন ও রপ্তানিকারী দেশগুলোর জোট অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ প্লাসের (ওপেক প্লাস) ১৩ সদস্যরাষ্ট্রের ৮টিই তেলের দৈনিক উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ সোমবার, ১ মে থেকে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকরও করা হয়েছে।
বৈশ্বিক তেলের বাজারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক ওপেক গঠিত হয় ১৯৬০ সালে। শুরুর দিকে আন্তঃসরকারি এ সংস্থার সদস্য ছিল ইরান, ইরাক, কুয়েত, সৌদি আরব ও ভেনেজুয়েলা— ৫টি দেশ। বর্তমানে ওপেকের সদস্যরাষ্ট্রের সংখ্যা ১৩টি।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর গত শতকের নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি রাশিয়াও এই জোটে যোগ দেয়। রাশিয়া অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর জোটের নতুন নাম হয় ওপেক প্লাস।
১ মে একটি ঘোষণা জারি করা হয় অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অবস্থিত ওপেক প্লাসের সদর দপ্তর থেকে। সেই ঘোষণার বরাত দিয়ে রুশ সংবাদমাধ্যম তাস ও মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি জানিয়েছে, মে মাসের প্রথম দিন থেকে চলতি ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিজ নিজ দেশের খনিগুলো থেকে পেট্রোলিয়ামের উত্তোলন কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, কুয়েত, ওমান, আলজেরিয়া, কাজাখস্তান, গ্যাবন—ওপেক প্লাসের এই আট সদস্যরাষ্ট্র। এর ফলে এখন থেকে তেলের বৈশ্বিক দৈনিক উৎপাদন কমবে ১৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল। ১৫৯ লিটারের সমপরিমাণ তরল বস্তুকে এক ব্যারেল হিসেবে ধরা হয়।
জোটের ঘোষণা অনুযায়ী, ১ মে থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সৌদি আরব দৈনিক উত্তোলন ৫ লাখ ব্যারেল, সংযুক্ত আরব আমিরাত ১ লাখ ৪৪ হাজার ব্যারেল, ইরাক ২ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল, কুয়েত এক লাখ ২৮ হাজার ব্যারেল, ওমান ৪০ হাজার ব্যারেল, আলজেরিয়া ৪৮ হাজার ব্যারেল, কাজাখস্তান ৭৮ হাজার ব্যারেল এবং গ্যাবন ৮ হাজার ব্যারেল তেল কম উত্তোলন করবে।
ওপেক প্লাসের প্রভাবশালী সদস্য রাশিয়া অবশ্য তেলের দৈনিক উত্তোলন হ্রাসের ঘোষণা দিয়েছিল চলতি বছরের শুরুর দিকেই। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্দার নোভাক জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন ৫ লাখ ব্যারেল তেল কম তুলবে রাশিয়া।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর রাশিয়ার ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে রুশ তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে রুশ তেলের দামও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
এদিকে তেলের বাজার প্রায় সম্পূর্ণ ডলারনির্ভর হওয়ায় এবং বাজারে রুশ তেলের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ডলারের মজুত বাঁচাতে তেল কেনা কমিয়ে দেয়। ফলে বৈশ্বিক তেলের বাজারে মন্দাভাব শুরু হয়।
এই পরিস্থিতিতে তেল রপ্তানি থেকে নিজেদের মুনাফা নিশ্চিত করতেই উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাশিয়া। তবে মস্কো এই পদক্ষেপ নেওয়ার পর টনক নড়ে ওপেক প্লাসের বাদবাকি সদস্যরাষ্ট্রগুলোরও।
গত এপ্রিলে জোটের সাধারণ সভায় তেলের দৈনিক উত্তোলন কমানোর প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে অধিকাংশ সদস্যরাষ্ট্র তাতে সায় দেয়। কিন্তু দৈনিক উৎপাদন কতখানি কমানো হবে— সে সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি সেই সভায়।
মঙ্গলবার তেলের উত্তোলন হ্রাসের পুরো ব্যাপারটি স্পষ্ট করল ওপেক প্লাস।
এসএমডব্লিউ